#লন্ডন: দিন গুনছেন না৷ সব কিছু ছেড়ে দিয়েছেন জীবনের উপর৷ শেষের সে দিন বলে তাঁর কাছে কিছু নেই৷ মস্তিষ্কে বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত বলিউড স্টার ইরফান খান লন্ডনে চিকিত্সারত৷ শরীর ভেঙে গিয়েছে৷ সংবাদ সংস্থা এপি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কার ফোনে সারলেন ইরফান৷ বেশি ক্ষণ কথা বলতে পারছেন না৷ কষ্ট হয়৷ অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী কণ্ঠে সাংবাদিককে জানালেন৷ খানিক আগেই ডাক্তার দেখে গিয়েছেন৷
কেমন আছেন ইরফান খান? জেনে নেওয়া যাক সংবাদ সংস্থা এপি-কে ফোনে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কার থেকে৷
সংবাদসংস্থা: হলিউডের বড় ছবিগুলি হাতছাড়া করছেন৷
ইরফান: (মৃদু হেসে) আমি চেয়েছিলাম আমেরিকান সিনেমা, হলিউডে দীর্ঘ সময় থাকতে৷ আমি ঠিক পথে যাত্রাও শুরু করেছিলাম৷ হলিউডে একটা দুর্দান্ত চরিত্রের অফার ছিল৷ চরিত্রটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম৷ ভারতে আমার কাজগুলিকে পিছিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, আমি ছবিটায় কাজ করব৷ কিন্তু...
সংবাদসংস্থা: এখন কী করছেন?
ইরফান: জীবনটাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি৷ একটি চেয়ারে বসে সামনে জীবনের অন্যদিকটা দেখার অভিজ্ঞতা অনবদ্য৷ একটি জার্নির মধ্যে আছি৷
সংবাদসংস্থা: আপনার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা গল্প চলছে৷ এই মুহূর্তে নিজের সম্পর্কে মানুষকে ঠিক কী জানাতে চান?
ইরফান: জীবন অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে৷ জীবন যে ভাবে দেখাচ্ছে, সে ভাবেই দেখছি৷ শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক-- সব দিক থেকে৷ পরমানন্দ বলতে যা বোঝায় আর কী! প্রথমে খবরটা শুনে কেঁপে উঠেছিলাম৷ কিন্তু ধীরে ধীরে অনুভব করলাম, অন্য ভাবেও জীবনকে দেখা যায়৷ পরমানন্দ ভাবটা সত্যিই খুব সুখের৷ মানসিক ভাবে হালকা লাগে৷ জীবনটাকে একবার এই ভাবে দেখার চেষ্টা করলেই বুঝবেন৷ একটা জানলা দিয়ে নিজেকে দেখা৷ জীবনের প্রতিচ্ছবিটা সিনেমার মতো দেখার আনন্দ প্রকাশ করা যায় না৷ ৩০ বছর মেডিটেশন করেছি, কখনও এমন উপলব্ধি হয়নি৷ বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি না-হলে এই স্বর্গীয় উপলব্ধি হত না৷ এখন যা-ই হবে, ভালো হবে, সেরা হবে৷
সংবাদসংস্থা: প্রতিদিনের রুটিন কী রকম এখন? স্ক্রিপ্ট পড়ছেন বা কাজে ফেরার প্ল্যান?
ইরফান: না৷ স্ক্রিপ্ট পড়া ছেড়ে দিয়েছি একেবারেই৷ প্রতিদিন আনপ্রেডিক্টবল৷ এই অভিজ্ঞতাটি ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব নয়৷ আমি ভাবতাম একটা সময়, আমার জীবনটা আনপ্রেডিক্টবল হোক৷ গতিময়তায় কাটুক৷ কিন্তু কখনও উপলব্ধি করিনি৷ এখন করছি৷ কোনও প্ল্যান করি না৷ ব্রেকফাস্ট করার পর আর কোনও প্ল্যান থাকে না৷ জীবন যে দিকে নিয়ে যায়, সে দিকেই যাচ্ছি৷ আসলে জীবনটা একটা রহস্য৷ কোনও কিছু প্ল্যান করে হয় না৷ সম্ভব নয়৷ স্রোতে এগিয়ে যাচ্ছি৷ মনে আর কোনও দ্বিচারিতা নেই৷ আমি সত্যিই এখন মানসিক ভাবে খুব ভালো আছি৷ ভাগ্যবানদেরই এই উপলব্ধির সুযোগ হয়৷সংবাদসংস্থা: আপনি চিকিত্সার জন্য লন্ডনে আছেন৷ চিকিত্সার বিষয়ে কিছু জানাতে চান?
ইরফান: কেমোর চতুর্থ পর্যায় শেষ৷ ৬টি কেমো হবে তারপর স্ক্যান৷ তৃতীয় কেমোর পর স্ক্যানের রেজাল্ট পজিটিভ ছিল৷ ৬টি কেমোর শেষে কী রকম থাকে, সেটাই আসল৷ তখন বোঝা যাবে৷ জীবনের কোনও গ্যারান্টি নেই৷ কারও নেই৷ আমার মন যেন সব সময় কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে, তোমার এই রোগ হয়েছে৷ যে কোনও সময় মৃত্যু হবে৷ কিংবা মাঝে মাঝে এই চিন্তাটা জাস্ট উড়িয়ে দিয়ে জীবন যেমন আছে, সে ভাবেই এনজয় করছি৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Irfan Khan, Irfan Khan Health, Irrfan Khan