Anurag Kashyap Exclusive Interview: এখনকার বাংলা ছবি দেখি না, অনেক উঁচু থেকে ধপাস করে মান পড়ে গেলে যা হয়, একান্ত সাক্ষাৎকারে অনুরাগ কাশ্যপ

অনুরাগ: ‘কেনেডি’ এমন সময়ে বানানো, যখন আমি খুব অন্ধকার একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আর আপনারা সেই আঁধারের ছাপ ছবিতে দেখতে পাবেন খুব স্পষ্টভাবে। বাকি ছবির ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।

অনুরাগ: না।

অনুরাগ: শেষ দেখেছি পদাতিক। পছন্দের ছবিগুলি আমি বারবার করে দেখি। হ্যাঁ দু’টো দেখেছিলাম, অটোগ্রাফ আর টনিদার বানানো ছবিটা… রাধিকা আপ্তে ছিলেন যেটায়…

অনুরাগ: ঠিক ঠিক।

অনুরাগ: হ্যাঁ, এখন তো ব্যবসাই সব। প্রথম সপ্তাহে একটা ছবি কেমন চলছে, তার উপর ছবির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। না চললে প্রযোজকেরা টাকা ঢালবে না তো। আমি নিজেই এই প্রবণতার শিকার। বাণিজ্যিক ছবির ব্রিগেডের বিরুদ্ধে লড়ে চলেছি, যে শিল্পক্ষেত্র মধ্যমেধার মানুষদের নিয়েই চলছে। এখন কোনও ভাল সাহিত্য থেকে ভাল চিত্রনাট্য তৈরি হবে? আরে প্রযোজকই তো পাওয়া যাবে না। আমার ধারণা, মৃণাল সেন কিন্তু আজকের দিনে ছবি বানাতে পারতেন না।

অনুরাগ: সে তো ছেড়েই দিচ্ছি, এখন মানুষ মোবাইল ফোনে ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে বা দ্বিগুণ গতি বাড়িয়ে (2x) ছবি দেখে! পরিচালকদের কষ্টটা বুঝতে পারছেন? তো এই সমস্ত কিছুই ছবির মান পতনের নেপথ্যে কাজ করে। তাই আলাদা করে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে বলছি না, কিন্তু…

অনুরাগ: হ্যাঁ, একদমই তাই। আপনি যখন এক তলা বা দোতলা থেকে মাটিতে পড়বেন, তাতে যতটা আঘাত লাগবে, আর যদি সাত তলা থেকে ঝাঁপিয়ে নীচে পড়েন, সেই পতনের ধাক্কা অনেক বেশি। বাংলা আসলে চিরকালই অনেকটা উঁচুতে ছিল, তা সে ছবি হোক, নাটক হোক, পেইন্টিং হোক, সাহিত্য হোক, অথবা অন্যান্য শিল্প।

অনুরাগ: (হেসে) ‘অ্যানিমাল’ নিয়ে কী ভাবি… আমি তো ভেবেছিলাম, ভাঙ্গার সঙ্গে ছবি দেওয়ার অপরাধে আমাকে ক্যানসেল করে দেওয়া হবে।

সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার সঙ্গে অনুরাগ কাশ্যপ

অনুরাগ: না, আমারও অনেক অনেক জায়গা খুবই সমস্যাজনক মনে হয়েছিল। অসুবিধা হয়েছিল। আমার মাথা থেকে বেরচ্ছিল না ছবিটা। আর সেসব নিয়ে আমি সোজা ভাঙ্গার কাছেই গিয়েছিলাম। বসে বসে সমস্ত সমস্যাগুলি নিয়ে প্রশ্ন করি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে তিনি আমায় উত্তর দিয়েছেন। আমার ওই সততাটা ভাল লেগেছিল।

অনুরাগ: আমাদের সমাজে এমন কিছু পবিত্র সত্য রয়েছে, যা খণ্ডন করা উচিত নয় বলে মনে করা হয়। ছবি বানানোর ক্ষেত্রে পরিচালকদের উপর যেন এই ফতোয়া জারি করা আছে। কিন্তু ভাঙ্গা কোথাও গিয়ে এই কয়েকটা সত্যকে ভেঙে বেরিয়েছে। আর তাই ওই ছবি গেম চেঞ্জার। আর একদমই সেই কারণে সেই ছবিটা আমরা তিন মাস পরেও আলোচনা করে যাচ্ছি। ছবি ভাল হোক, বা খারাপ, আলোচনা হবে, এটাই কাম্য।

অনুরাগ: হ্যাঁ খুবই রেগে গিয়েছিল। আমি ওদের রাগ, অভিমান নিতে প্রস্তুত। মানুষের সঙ্গে বসে কথা বলতে চাই। আমি মানুষকে ক্যানসেল করার পক্ষপাতী নই। কোনও ছবি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হলে পরিচালকের সঙ্গে বসে তাঁকে প্রশ্ন করতে রাজি। এরকম যে, কত কত ছবি আছে গোটা দুনিয়ায়, যা দেখে দর্শক বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ‘দ্য ব্রাউন বানি’ বলে একটি ছবি হয়েছিল, যা দেখে দর্শকেরা হল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বসে প্রশ্ন করার পক্ষপাতী। আমি মনে করি, যে ছবি মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলে, সেটা আসলে ভাল কোনও কাজই করেছে।

অনুরাগ: আসলে কী বলুন তো, ছবি হিট হওয়ার পরে না সমস্ত প্রজেকশনই গ্লোরিফিকেশনের দলে চলে যায়। আপনি ৮০, ৯০-এর দশকের ছবির কথা ভাবুন, কী হত ওখানে? এখনও তো লোকে ‘তেরে নাম’ দেখে যাচ্ছেন। অজয় দেবগন আর করিশ্মা কাপুরের ছবির ওই দৃশ্যটি দেখেননি, যেখানে নারী চরিত্রকে জুতো চাটতে বলছে পুরুষ চরিত্রটি? আমার কী মনে হয় বলুন তো, তখনও সচেতনতা অতটা বাড়েনি। তখনও জেনারেশন অতটা উওক (Woke) ছিল না।

অনুরাগ: তা তো বটেই। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে যতটা আলোচনা করা হয়, তার থেকে অনেক বেশি আলোচনা হয়েছে ‘অ্যানিমাল’ রিলিজের পর। শেষ কয়েক মাস যে পরিমাণ প্রশ্ন মানুষ তুলেছে, সেটা আগে দেখিনি। আর সেটাই প্রয়োজন। দেখুন, যেই পরিচালকেরা তাঁদের ছবির মাধ্যমে প্রশ্ন করেন না, তাঁদের আমি সুবিধাবাদী বলে মনে করি। যাঁরা ভাল পরিচালক, তাঁরা সমাজকে উস্কানি (provoke) দেবে। আর তার জন্য হয়তো সমাজ তাঁকে বারবার ক্যানসেল করবে, ক্ষোভ দেখাবে…

অনুরাগ: একদমই তাই। আপনি যাঁকে প্রশ্ন করছেন, তিনি একই ঘটনার শিকার। পরিচালকেরা বহু বহু যুগ ধরে সমাজকে উস্কানি (provocative content) দিয়ে চলেছেন। সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বলা হত, তিনি ‘পভার্টি পর্ন’ (দারিদ্রকে যৌনতার মতো বিক্রি করা) বিক্রি করে ছবি চালাতেন। প্যাসোলিনি তো চিরকাল সংগঠিত ধর্মাচরণের বিরুদ্ধে ছবি বানিয়েছেন। আর তার জন্য প্রকাশ্য রাস্তায় পরিচালককে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল। এই বাংলারই পরিচালক কিউ (Q) যেভাবে সমাজকে প্রোভোক করে, প্রশ্ন করে ছবি বানিয়ে গিয়েছেন, তার জন্য কম কথা শুনতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু আজ তাঁর ছবি বুঝে চর্চা করা হয়। আর আমি সেটাকেই সাধুবাদ জানাই।

অনুরাগের ছবি

অনুরাগ: কী জানি। আমি অত কিছু পরিকল্পনা করে চলি না। কিছুই ভাবিনি।

অনুরাগ: আমার সবথেকে সৎ ছবি, ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’। আজ পর্যন্ত ওটাই পছন্দের ছবি বলা যায়।