কলকাতা: তারকা এবং বিতর্ক কোথাও যেন একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ। চারপাশে ঘটে চলা নানা বিতর্ক, সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোলিং এবং ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের রাজনীতি- এ সব নিয়েই সম্প্রতি প্রশ্ন করা হয় অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। বরাবরের মতো সোজাসাপ্টা কথায় অনির্বাণ বললেন, "বিতর্ক আসলে এক প্রকার বিনোদন। বিতর্ক থেকে মানুষ আনন্দ পায়। তাই হয়তো কোথাও বিতর্ককে জিইয়ে রাখে। আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক-ট্রোলিং এগুলো ক্ষণিকের অতিথি মাত্র। দু'তিন দিন এগুলো ঝড়ের মত বয়ে যায়। তারপরই সব চুপ। এগুলো আসলে মানুষকে বিনোদন ছাড়া কিছুই দেয় না।"
অনির্বাণ মনে করেন, নানা কারণে বিতর্ক তৈরি করে শুধুমাত্র আনন্দ প্রদান করা হয়। এতে সমাজের কোনও প্রগতি বা উন্নতি হয় না। মানুষের চারপাশটাও বদলায় না। পরিচালক-অভিনেতার কথায়, "আজকের দিনে খবর হোক বা বিতর্ক, শুধু দেখে শুনে ভুলে যাই। কিছুই মনে রেখে দিই না। কারণ আমি মনে করি, এগুলোর দ্বারা কোন সৃজনশীল কাজ হয় না। সিনেমা নাটক বা অন্য কোন শিল্পের কোনও রকম উত্তরণ ঘটে না।"
শুক্রবার বক্স অফিসে মুক্তি পেতে চলেছে অনির্বাণের নতুন ছবি 'মিথ্যে প্রেমের গান'। সেখানে একজন গায়ক-সুরকারের চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। এত দিন যে ধরনের চরিত্র অভিনয় করেছেন, তার থেকে অনেকটাই আলাদা এই চরিত্র। মিউজিক্যাল এই ছবিতে মোট ১১ টি গান রয়েছে। ছবি সম্পর্কে অনির্বাণ বলেন, "গান কখনও মিথ্যে হয়ে যায় না। প্রেমের বিষয়টা আপেক্ষিক। তবে গান সব সময় থেকে যায়।"
আরও পড়ুন: মিস্টার ও মিসেস মালহোত্রাকে শুভেচ্ছা বলিপাড়ার, সিড-কিয়ারার বিয়ের ছবিতে প্রেমের তুফান
আরও পড়ুন: অপেক্ষার অবসান, নবদম্পতির ছবি প্রকাশ্যে, কিয়ারার গালে চুম্বন আঁকলেন সিদ্ধার্থ
নিজের গান প্রসঙ্গে অনির্বাণ জানান, এখনও পর্যন্ত তাঁর পাঁচটি গান মুক্তি পেয়েছে। যত দিন অভিনয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গানের চর্চা চালিয়ে যেতে পারবেন, তত দিন গান করে যাবেন। পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিষয়টি সে রকমই। তবে একটা কাজের সঙ্গে যেন অন্যটির যাতে সংঘাত না হয়, সেই ভারসাম্যও বজায় রাখেন অনির্বাণ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "যখন অভিনয় করি, তখন শুধু অভিনয়টাই করি। আবার যখন পরিচালনা করি, তখন শুধু পরিচালনা নিয়েই ভাবি। এটাই আমার ধরন।"
অনির্বাণ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও তা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন একজন নাগরিক। রাজনীতি নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, " এই মুহূর্তে আমার রাজনীতিতে পা রাখার কোনও পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যতে যদি এমন কিছু ঘটে, তখন দেখা যাবে। তবে বর্তমান রাজনীতিবিদদের ভাষাজ্ঞান কোথাও যেন উবে গেছে। যে ধরনের কথা ও শব্দ আজকাল রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করে থাকেন, তা সত্যিই অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আর তাই তাঁদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা রাখাও উচিত নয়।"
সম্প্রতি শাহরুখ খানের 'পাঠান' নিয়ে টলিউড কোথাও যেন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। বারবার অভিযোগ উঠেছিল, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একতার অভাব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনির্বাণের জবাব, "বিষয়টি নিয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মত অভিজ্ঞ এবং অনেক সিনিয়র একজন পরিচালক প্রথম প্রশ্ন তোলেন। কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়) ডিস্ট্রিবিউশন এবং সিনেমা হলে শো নিয়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন তোলেন। তাঁর মতো একজন শিক্ষিত সংগঠিত মানুষ যখন বিষয়টি নিয়ে যথাযথ বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তার উপর আমার উপর দিয়ে কিছু বলার সাজে না।"
তিনি আরও যোগ করেন, "কৌশিকদা যা বলেছেন, তার উপর আমার মনে হয় না বাড়তি কিছু বলার আছে। আর এই ট্রেন্ড নতুন কিছু নয়। আগেও শাহরুখ-সলমনের সিনেমা এলে বাংলা ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে নতুন করে গেল গেল রব তোলার কোনও মানেই হয় না। অন্তত আমার সুস্থ মস্তিষ্ক তাই বলে।"
তবে অনির্বাণ মনে করেন, প্রেক্ষাগৃহে এসে সিনেমা দেখে দর্শকদের ভাল-মন্দ বিচার করা উচিত। ছবি না দেখে বাড়িতে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করা কখনওই কাম্য নয়। ছবি হিট-ফ্লপের দায়িত্ব অবশ্যই অভিনেতা এবং নির্মাতাদের। তবে সংগঠিত সমালোচনায় বিশ্বাসী 'বল্লভপুরের রূপকথা'র পরিচালক।
তবে অনির্বাণের কথায় যেন আক্ষেপের সুর, 'তিতুমীর' থেকে অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার বিতর্ক, এই সব কিছুই কোথাও যেন হতাশার দিকে ঠেলে দেয় তাঁকে। তাঁর কথায়, "রাষ্ট্র সব সময় মুখ্য। শিল্প সব সময় গৌণ। অন্তত ইতিহাস তাই বলে। এ ভাবেই চলছে এবং যত দিন যাচ্ছে সমাজ অবনতির পথে এগোচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভাল সিনেমা, নাটক, সাহিত্য বা অন্য কোনও শিল্পকর্ম তৈরি হবে না।"
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।