Lok Sabha Election 2024: ভোটের ডিউটিতে গিয়েই জীবন শেষ...! ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কড়া সিদ্ধান্ত বাবা মায়ের
- Published by:Riya Das
- news18 bangla
- Reported by:Ranjan Chanda
Last Updated:
Lok Sabha Election 2024: ছেলের মৃত্যুর পর ১৫ বছর ধরেই ভোট দেন না বাবা-মা, ছেলের মৃত্যুর পর সিদ্ধান্ত তাদের, এবারও দিলেন না ভোট।
পশ্চিম মেদিনীপুর: নির্বাচন এলেই তাঁরা ভয় পান। মাথায় ঘুরতে থাকে সেদিনের সেই কথা। ইহলোক ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি দেন তাঁদের ছেলে। তাই পুত্রশোকে আর ভোট দিতে যান না এই দম্পতি। কিছুটা রাগ, আক্ষেপ তাদের মনে। ছেলেকে হারিয়ে কার্যত নিঃস্ব বাবা-মা। এখন ভরসা শুধু চোখের জল। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে ভোট দান থেকে বিরত রেখেছেন নিজেদের। কারণ ছেলের অকাল মৃত্যু। যার নেপথ্যে ছিল নির্বাচন।
সেদিনও ছিল লোকসভা নির্বাচন, ডিউটিতে গিয়ে মৃত্যু হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের একই পরিবারের দুই ছেলের। ১৫ বছর ধরে আর ভোট দেননা অভিভাবকরা। মাঝে তিনটে লোকসভা নির্বাচন অতিবাহিত, কিন্তু এবারও ভোট দিতে গেলেন না এই দম্পতি। ২০০৯ সাল। গোটা জঙ্গলমহল তখন মাওবাদীদের দখলে। অস্ত্র হাতে দিনরাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাওবাদীরা। খুনের পর খুন! এর মধ্যেই এল পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচন। দিনটা ছিল ৩০ এপ্রিল। লোকসভা নির্বাচনে সেবার জঙ্গলমহলের সমস্ত বুথে ভোট গ্রহণ করা যায়নি। ভোট করতে হয়েছিল নিরাপদ জায়গায় একাধিক বুথে এবং ভোটারদের তুলে নিয়ে এসে। তুলনামূলক জনবহুল এলাকার স্কুলে একাধিক বুথ। ভোট গ্রহন কেন্দ্রে ভোটারের চেয়ে জওয়ান বেশি। ওইদিন লোকসভা ভোটের কাজ শেষ করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ইভিএম নিয়ে বুথ থেকে ফিরছিলেন ভোট কর্মীরা। পথে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ। দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে মৃত্যু হয় বেলপাহাড়ির এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী তথা ভোটের সেক্টর অফিসার প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
advertisement
advertisement
তারপর থেকেই ভোট দেওয়া দূরের কথা, আর কোনও দিন বুথ মুখো হননি তাঁর বাবা-মা। বরং ভোট এলেই বুক দুরু দুরু করতে থাকে। অনেকবার বিভিন্ন দলের কর্মীরা এসে বুঝিয়েছেন কিন্তু পুত্র শোক ভুলে বুথমুখী হন না তাঁরা। শুনতে চাননা ভোটের কথা। তাঁরা পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী ব্লকের গোয়াপিয়াশালের বাসিন্দা নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসাদ ছিলেন তাঁদেরই তরতাজা ছেলে। ওই ঘটনার বছর তিনেক আগেই পঞ্চায়েত দফতরে চাকরি পেয়েছিলেন প্রসাদ। লোকসভা নির্বাচনই ছিল ভোটকর্মী হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ। ওইদিন (৩০ এপ্রিল) রাতেই মর্মান্তিক এই খবর পৌঁছয় পরিবারে। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে! বিনা মেঘে পর পর বজ্রপাতের মতই ওই দিন আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে ওই পরিবারে। ভোটের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রসাদের জেড়তুতো ভাই, স্কুলের শিক্ষাকর্মী পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।একই পরিবারে তরতাজা দু’জনের মৃত্যু! এই ঘটনার পর থেকে অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত কোনও ভোটে ভোটদান থেকে বাদই রইলেন।
advertisement
বয়স বাড়ছে তাঁদের। মাথার উপর ভরসা নেই তাদের।বর্তমানে, নিত্যানন্দ বাবু অর্থাৎ প্রয়াত প্রসাদের বাবা কিডনির রোগে ভুগছেন। চলছে ডায়ালিসিস। প্রসাদের মা নমিতা দেবীর বয়স ৭৩ বছর। ভোটের কথা শুনলেই বিরক্তি৷ ছেলের মৃত্যুর পর থেকে ভোটে কোনও আগ্রহ নেই তাঁদের। কেউ কথা বলতে চাইলেও রাগ হয় তাদের। ছেলের মৃত্যুর পর প্রসাদে স্ত্রী চাকরি পেলেও সমস্যায় পড়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি। কোনওভাবে চলছে দিন। প্রসাদের মা নমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেদিনের পর থেকে আমরা আর কোনওদিন ভোট দিইনি। ভোট দিতে ইচ্ছেও করেনা। কেন ভোট দিতে যাবো? ভোটের দিন ছেলের মৃত্যু হল। ভোট দিতে ইচ্ছে করবে? এই ঘটনার পর থেকে আর বুথ মুখো হই না। স্বামী অসুস্থ,ডায়ালিসিস চলছে। আমাদের আর কিছু ভাল লাগেনা। ওসব কথা আর আলোচনা করতেও চাই না। আমরা চাই, জীবনে যেন এরকম ঘটনা কারোর সঙ্গে না ঘটে!”
advertisement
রঞ্জন চন্দ
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
May 25, 2024 6:19 PM IST