#কলকাতা: মানসিক সমস্যা নাকি অন্য কিছু? আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুমকি চিঠি পাঠানোর অভিযোগে ধৃত কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অনুপম সেনের কাণ্ডকারখানা দেখে রীতিমতো তাজ্জব কলকাতা পুলিশের দুঁদে গোয়েন্দারাও (Alapan Bandopadhyay Threat Letter Update)৷ কারণ গত দু' বছর ধরে সমাজের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই চিকিৎসক পরের পর হুমকি চিঠি পাঠাচ্ছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা৷ গত ২৫ অক্টোবর আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Bandopadhyay) সহ মোট সাতজনকে শরৎ বোস রোডের পোস্ট অফিস থেকে হুমকি চিঠি পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ৷
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ২৫ অক্টোবর যে সাত জনকে অরিন্দম সেন নামে ওই চিকিৎসক হুমকি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও রয়েছেন এনআরএস হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল, ডিরেক্টর মেডিক্যাল এডুকেশন, সায়েন্স সেক্রেটারি, মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালের মতো বিভিন্ন পদাধিকারীরা৷
আরও পড়ুন: আলাপনকে হুমকি চিঠি পাঠিয়েছিলেন চিকিৎসক! ধৃত আরও দুই, তদন্তে নেমে তাজ্জব পুলিশ
এ ছাড়াও ওই তালিকায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়৷ যিনি সম্পর্কে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী৷ তাঁকে চিঠি পাঠিয়েই আলাপন বন্দ্যোপাদ্যায়ের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়৷ এনআরএস-এর প্রিন্সিপালকে পাঠানো হুমকি চিঠিটিও ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ৷ বাকি চিঠিগুলিও হাতে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এনআরএস-এর প্রিন্সিপালকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছিল, হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসকদের একটি বিক্ষোভ চলাকালীন দুই চিকিৎসকের মৃত্যু হবে৷
কিন্তু কেন এ ভাবে বেনামে হুমকি চিঠি লিখতেন ওই চিকিৎসক? প্রাথমিক জেরায় তদন্তকারীদের ধারণা, মানসিক সমস্যা থেকেই এমনটা করতেন অরিন্দম সেন৷ যেমন যাঁর নাম করে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেই গৌরহরি মিশ্র ধৃত চিকিৎসকের প্রতিবেশী৷ অতীতে গৌরহরি বাবুর স্ত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত অরিন্দম সেনের কোনও ঝামেলা হয়েছিল৷ সেই আক্রোশ থেকেই তিনি গৌরহরি মিশ্রের নাম করে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠান বলে দাবি তদন্তকারীদের৷ আবার কোনও সময় টিভি দেখে বা সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রভাবিত হয়েও ওই চিকিৎসক হুমকি চিঠি পাঠাতেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷
আরও পড়ুন: হাউহাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ল সুপারি কিলার! ভেসে উঠল হাওড়ার ব্যবসায়ী খুনের রোমহর্ষক 'সেই রাত'...
তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, হুমকি চিঠির খসড়া নিজেই তৈরি করে গাড়ির চালক রমেশ সাউকে দিতেন অরিন্দম সেন৷ রমেশ সেই চিঠি টাইপ করার জন্য নিয়ে যেতেন টাইপিস্ট রমেশ কুমার সাউয়ের কাছে৷
তবে শুধু মানসিক সমস্যা থেকেই ওই চিকিৎসক বেনামে একের পর এক হুমকি চিঠি পাঠাতেন, তা এখনই মানতে রাজি নয় পুলিশও৷ কারণ মানসিক সমস্যা থাকলে একজন চিকিৎসক কীভাবে নামী একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিনের পর দিন রোগীদের চিকিৎসা করছেন, সেই প্রশ্নও উঠছে৷ ওই চিকিৎসকের মানসিক চিকিৎসার কোনও অতীত রেকর্ড রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ পাশাপাশি, হুমকি চিঠিগুলি পাঠানোর মধ্যে পরিকল্পনার ছাপও স্পষ্ট৷
পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে নেমে প্রথমে টাইপিস্ট বিজয় কুমার কয়ালকে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে গ্রেফতার করা হয়৷ তাঁকে জেরা করেই চিকিৎসক অরিন্দম সেন এবং তাঁর গাড়ির চালক রমেশ সাউয়ের খোঁজ মেলে৷ ধৃত তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে হুমকি চিঠি রহস্যের সমাধান করতে চান তদন্তকারীরা৷
উত্তর কলকাতার রাজা রামমোহন সরণীর বাসিন্দা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অরিন্দম সেনের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িতে একাই থাকতেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অরিন্দম সেন৷ সোমবার রাতে সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ৷ সেভাবে কারও সঙ্গে মিশতেনও না৷ বাড়ির চেম্বারেও সেভাবে রোগীদের আনাগোণা ছিল না বলেই জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা৷ তবে অরিন্দম সেনের মানসিক সমস্যা ছিল কি না, সে বিষয়ে অন্ধকারে এলাকার বাসিন্দারা৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।