Saradindu Ghosh
#কাটোয়া: এবার করোনার জেরে ভাঙনের মুখে দাম্পত্য! ৩৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে স্বামীকে এক রকম অগ্নিপরীক্ষার সামনে দাঁড় করালেন স্ত্রী! এমনই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার মণ্ডল পরিবারের। উত্তরবঙ্গ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন স্বামী। মুখের ওপর সপাটে দরজা বন্ধ করে দিলেন স্ত্রী। কারণ, করোনা
আতংক। এই ঘটনা এখন এলাকায় আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখে মুখে ঘুরছে মন্ডল পরিবারের ঘটনা। ঠিক কী ঘটেছে ওই পরিবারে?
শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে এই আশঙ্কায় উত্তরবঙ্গ ফেরত স্বামীকে বাড়িতেই ঢুকতে দিলেন না স্ত্রী। বেশ কিছুক্ষণ বাড়ির বাইরে বসে থেকেও সুরাহা মেলেনি। উপায়ন্তর না দেখে সোজা কলকাতার বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে পৌঁছে যান স্বামী। সেখানের চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাঁকে ফিট সার্টিফিকেট দেন। করোনা মুক্ত সার্টিফিকেট দরজায় দেখিয়ে তবেই ঘরের চৌকাঠ ডিঙোনোর ছাড়পত্র পান অরুন মন্ডল নামে ওই ব্যক্তি।
তবে ঘরে ঢোকার সেই অনুমতি এখন শর্তাধীন। চিকিৎসকের পরামর্শে এবং স্ত্রীর নির্দেশে আপাতত আলাদা ঘরে চোদ্দ দিন থাকতে হচ্ছে অরুনবাবুকে। এই সময় দূর থেকে বিশেষ পর্যবেক্ষণ চলছে তার ওপর। এরমধ্যে আবার জ্বর সর্দি কাশি হলে পরিনাম কি হবে ভেবে উঠতে পারছেন না তিনি।
কাটোয়ার স্টেডিয়াম পাড়ার ব্যবসায়ী অরুন মণ্ডল ৬ মার্চ দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন। এই সময় বাইরে যেতে পই পই করে বারণ করেছিলেন স্ত্রী ও বাড়ির অন্যান্যরা। কিন্তু সে সময় তিনি সেসবের কোনও পরোয়া করেননি। ১৩ মার্চ বিকালে কাটোয়া ফিরলে বাড়ি ঢুকতে তাঁকে বাধা দেন স্ত্রী কল্পনা মণ্ডল। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, চারদিকে করোনা ভাইরাসের ছড়াছড়ি। অতএব করোনা মুক্ত সার্টিফিকেট আনলে তবেই বাড়িতে বসবাসের অনুমতি মিলবে।
তবে কি ৩৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে ছেদ পড়ে যাবে! সেই আশংকা দেখা দেওয়ায় তা আটকাতে নাস্তানাবুদ স্বামী করোনামুক্ত সার্টিফিকেটের জন্য ছুটলেন কলকাতার বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে। কিন্তু চাইলেই কি এভাবে সার্টিফিকেট পাওয়া যায়! আবদার শুনে অবাক হন ডাক্তাররা। কিন্তু তা না পেলে দাম্পত্যে বিচ্ছেদ অনিবার্য বোঝাতে চিকিৎসকদের হাতে পায়ে ধরেন অরুনবাবু। অবশেষে মেলে সেই সার্টিফিকেট।
কলকাতার হাসপাতালে থেকে করোনামুক্ত সার্টিফিকেট জুটিয়ে বাড়ি ফিরেও ঘর মেলেনি। সিঁড়ির নিচে একচিলতে ছোট্ট ঘরে অরুন মণ্ডলের ঠাঁই হয়েছে। আলাদা থালা, গেলাস, নিয়ে কোনরকমে চলছে কোয়েরেন্টাইন জীবন যাপন। চোদ্দ দিনের মধ্যে মাত্র তিনদিন পার করেছেল অরুন মণ্ডল। স্ত্রী কল্পনা মণ্ডল মুখের হাসি চেপে দিন গোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।