কলকাতা: প্যালেস অন হুইলস, রামায়ণ এক্সপ্রেসের মতো বিলাসবহুল সব ট্রেন। ফাইভ স্টার সার্ভিস। খানাপিনার এলাহি আয়োজন। আধুনিক সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মজুত। এদেশে এমন আরও ট্রেন আছে। লোকাল ট্রেনও আধুনিক হচ্ছে। আসছে বন্দে ভারতের মতো হাই স্পিড ট্রেন।
কিন্তু ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, এই ভারতেই একটা সময় ট্রেনের কামরায় টয়লেট পর্যন্ত ছিল না। হ্যাঁ, এটাই সত্যি। ভারতে রেলের যাত্রা শুরু হয় ১৭০ বছর আগে। ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল তৎকালীন বম্বে থেকে থানে পর্যন্ত চলে ভারতের প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন। প্রায় ৫৬ বছর এই ট্রেন ট্র্যাকে দৌড়েছে টয়লেট ছাড়াই।
ট্রেনে টয়লেট না থাকলে যা হওয়ার তাই হত। ট্রেন থামলেই যাত্রীরা লাইনের পাশে বা আশেপাশের ঝোপে যেতেন টয়লেট করতে। ট্রেন দাঁড়াত বড়জোর ২ মিনিট। ফলে টয়লেটের মাঝপথেই ছুটে আসতে হত যাত্রীদের। অনেকে ট্রেন মিস করতেন। তাড়াহুড়োয় ট্রেন ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এমনই এক বাঙালি যাত্রী রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন, কামরাতেই টয়লেটের ব্যবস্থা করা হোক। সেই শুরু।
১৯০৯ সালে ভারতীয় রেলে টয়লেট চালু হয়। হয়তো আরও দেরি হত যদি না অখিলচন্দ্র সেনের পেট খারাপ না হত। এ এক মজার গল্প। পশ্চিমবঙ্গের আহমেদপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন বাঙালি যুবক অখিলচন্দ্র সেন। কিন্তু ট্রেনে ওঠার পর থেকেই পেট গুড়গুড়। যা হোক করে চেপেচুপে বসেছিলেন তিনি। স্টেশনে ট্রেন থামতেই দৌড়। লাইনের পাশেই বসে পড়েন মলত্যাগ করতে। কিন্তু ২ মিনিটে কী আর পেট পরিষ্কার হয়! গার্ড হুইসল বাজিয়ে দিল, ট্রেন চলতে শুরু করল। আর অখিলচন্দ্র ওই অবস্থাতেই ধুতি আর ব্যাগ ধরে দৌড়তে শুরু করলেন। ট্রেন ধরতে হবে তো। কিন্তু ট্রেন ততক্ষণে গতি নিয়ে নিয়েছে। অখিল উঠতে পারেননি। তাঁর এই দুর্দশার কথা জানিয়ে রেলওয়ের সাহেবগঞ্জ বিভাগীয় অফিসে চিঠি দেন অখিল। তাঁর লেখা সেই চিঠি আজও দিল্লির রেল মিউজিয়ামে সযত্নে রাখা আছে।
আরও পড়ুন: অল্প সময়ে বিকল্প রোজগারের পথ দেখাচ্ছে হুগলির মাশরুম চাষচিঠিতে অখিল লিখেছেন, ‘স্যর, আমার পেট খারাপ ছিল। আহমেদপুর স্টেশনে টয়লেট করতে নামি। সবে পায়খানা করতে বসেছি, তখনই গার্ড হুইসল দিল। ভয়ে আমি উল্টে পড়লাম। ওই অবস্থাতেই একহাতে ব্যাগ আর অন্যহাতে ধুতি ধরে পড়িমড়ি করে দৌড়তে শুরু করি। স্টেশনের নারী-পুরুষ সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ট্রেন ছেড়ে চলে গেল… এটা খুব অন্যায়। যাত্রীরা টয়লেটে গেলে গার্ড কয়েক মিনিট ট্রেন থামাবে না? আপনি দয়া করে গার্ডের মোটা টাকা জরিমানা করুন। না হলে এই চিঠি সংবাদপত্রের দফতরে পাঠিয়ে দেব’।
এই চিঠির পড়েই নড়েচড়ে বসে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের আধিকারিকরা ঠিক করেন, ৫০ মাইলের বেশি দূরত্বের ট্রেনে টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে। যাত্রীরা ১৯০৯ সালে এই সুবিধা পেলেও রেল ইঞ্জিনে এই সুবিধা আসতে লোকো পাইলটদের ২০১৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ২০১৬ সালের আগে লোকোয় কোনও টয়লেট ছিল না। এর পর সেখানেও টয়লেট বসানো শুরু হয়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Indian Railways, Train Toilet