রেকারিং ডিপোজিট স্কিমে সুদের হার গণনা করা হয় কী ভাবে? রেকারিং ডিপোজিটে সুদ গণনা করার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। আর সেটা নির্ভর করে বেশ কয়েকটা ফ্যাক্টরের উপর। গ্রাহক কত টাকা, কত বছরের জন্য কোন স্কিমে বিনিয়োগ করছেন, সেটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রেকারিং ডিপোজিটে মূলত জমা করা টাকার উপর বার্ষিক হারে সুদ গণনা করা হয় এবং প্রতি ত্রৈমাসিকের শেষে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ-সহ তা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে যোগ করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসে রেকারিং ডিপোজিট স্কিমে ৫.৮ শতাংশ থেকে ৭.২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়া হয়।
দেশের প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসেই রেকারিং ডিপোজিট (Recurring Deposit) খোলা যায়। এর জন্য সরকারি ব্যাঙ্কে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা লাগতে পারে। পোস্ট অফিসেও ১০০ টাকা দিয়েই রেকারিং ডিপোজিট খোলা যায়। এখন দেখে নেওয়া যাক, এই অ্যাকাউন্টে কী ভাবে সুদের হার গণনা করা হয়। রেকারিং ডিপোজিটে সুদের হার (Interest Rate) গণনা করার জন্য একটি সূত্র আছে।
সেটি হল–
এম = আর [(১+আই) এন – ১]/ ১– (১+আই) – ১/৩। M = R [(1+i) n – 1]/ 1 – (1+i) -1/3 এই সূত্রে ‘এম’ (M)-এর অর্থ, ম্যাচুরিটির পরিমাণ। ‘আর’ (R)-এর অর্থ, মাসিক কিস্তি। ‘এন’ (n)-এর অর্থ, ওই স্কিমে যতগুলি কোয়ার্টার পড়ছে তার সংখ্যা। ‘আই’ (i)-এর অর্থ সুদের হার।
রেকারিং ডিপোজিটে মোট বিনিয়োগের পর মেয়াদ শেষে কত টাকা রিটার্ন আসবে, সেটা গণনা করা একটা জটিল পদ্ধতি। বিশেষ করে যাঁরা প্রথম বার বিনিয়োগ করছেন, তাঁদের কাছে তো বটেই। তাঁদের জন্য একটি সহজ পদ্ধতি হল-- ‘আরডি ক্যালকুলেটর’। রেকারিং ডিপোজিটের সুদের হার গণনার জন্য এটাই সব চেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। গ্রাহকের বিনিয়োগ করা অর্থ নির্দিষ্ট রেকারিং স্কিমের আওতায় মেয়াদ শেষে কত রিটার্ন দেবে, তা মুহূর্তে গণনা করে দেয় ‘আরডি ক্যালকুলেটর’। এতে গণনা করার জন্য গ্রাহককে যে বিষয়গুলিতে নজর রাখতে হবে, সেগুলি হল – ১। মাসিক আমানতের পরিমাণ: অর্থাৎ গ্রাহক প্রতি মাসে কত টাকা বিনিয়োগ করতে চাইছেন।
২। মেয়াদ কাল: গ্রাহক যত মাসের জন্য রেকারিং ডিপোজিট স্কিমে বিনিয়োগ করতে চান, তার সংখ্যা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ১ বছরের জন্য হলে ১২ মাস, ৫ বছরের জন্য হলে ৬০ মাস, ১০ বছরের জন্য হলে ১২০ মাস, ১৫ বছরের জন্য হলে ২২০ মাস, ২০ বছরের জন্য হলে ২৪০ মাস।
৩। সুদের হার: রেকারিং ডিপোজিটের জন্য ব্যাঙ্ক অথবা পোস্ট অফিস বছরে যত হারে সুদ দিচ্ছে, তার পরিমাণ। এই সুদের হার কখনও এক থাকে না। সরকার কর্তৃক এটা নির্ধারিত হয়। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নীতি অনুসারে তারও হেরফের ঘটে।
আরও পড়ুন: RD: নিশ্চিত ও ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের অন্যতম রাস্তা রেকারিং, টাকা-পয়সা খরচের আগে ভাবুন, দেখুন, জানুন
৪। কিস্তির সময়কাল: গ্রাহক যে অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তা মাসিক, ত্রৈমাসিক, সান্মাসিক এবং বার্ষিক কিস্তিতে জমা করতে পারেন।
৫। সুদের হার: সাধারণত বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সুদের হারও বিভিন্ন। তবে বার্ষিক ৫.৮ শতাংশ থেকে ৭.২৫ শতাংশ পর্যন্ত হারে সুদ পাওয়া যায়। প্রবীণ নাগরিকরা এর উপর ০.০৫ শতাংশ বেশি সুদ পান। সাধারণত বিনিয়োগের শুরুতেই সুদের হার নির্ধারিত হয়ে যায়। মেয়াদ কালে সেটার পরিবর্তন হয় না। তবে প্রতি তিন মাসে সুদ থেকে উপার্জিত অর্থের পরিমাণ বাড়ে। এই সুদ গণনা করারও একটি সূত্র আছে।
সেটি হল-- এ = পি (১ + আর / এন) ^ এনটি। এখানে ‘এ’ হল চূড়ান্ত পরিমাণ, ‘পি’ হল প্রাথমিক বিনিয়োগ অর্থাৎ মূল পরিমাণ, ‘আর’ হল সুদের হার, ‘এন’ হল প্রতি বছর সুদ থেকে উপার্জিত অর্থ, ‘টি’ হল প্রকল্পের মেয়াদ।
যে কোনও ব্যাঙ্কের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আরডি ক্যালকুলেটর থাকে। গ্রাহক তাতে বিনিয়োগের পরিমাণ, মেয়াদ কাল, সুদের হার বসিয়ে খুব সহজেই মেয়াদ শেষে সঞ্চয়ীকৃত অর্থের পরিমাণ জানতে পারেন। আরডি ক্যালকুলেটর ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা আছে। সেগুলি হল – প্রথমত, বিনিয়োগের মেয়াদ কালে গ্রাহকের অর্থ কী ভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, সেই সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, ব্যবহার করা খুব সহজ। সুদের হার পরিমাপ করা এমনিতেই একটি জটিল পদ্ধতি। খাতায়-কলমে সেটা করতে গেলে অনেকটা ঘাম ঝরাতে হয়। তার উপর ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
কিন্তু আরডি ক্যালকুলেটর সেই কাজটা করে নিমেষে। বড় জোর ১ থেকে ২ মিনিট সময় নেয়। ফলে সময়ও অনেকটাই বাঁচে। গ্রাহক অন্য কাজে মন দিতে পারেন। তৃতীয়ত, নিখুঁত এবং নির্ভুল গণনা পদ্ধতি। ভুল হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। যদি মাসিক প্রদেয় অর্থের পরিমাণ এবং মেয়াদ কাল ঠিকঠাক বসানো হয়, তা হলে মেয়াদ শেষে গ্রাহক কত টাকা পাবেন, তা নিখুঁত ভাবে বলে দেবে আরডি ক্যালকুলেটর। চতুর্থত, যত বার খুশি ব্যবহার করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন বিনিয়োগের অর্থ বা মেয়াদ কাল বসিয়ে গ্রাহক সুবিধা মতো নিজের সুবিধা এবং পছন্দটা বুঝে নিতে পারেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Business