শুভাংশু প্রথমেই কী 'খাবেন' জানেন...? কী খান রুশ মহাকাশচারীরা? শুনলেই চমকাবেন, শিওর!

ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা অবশেষে মহাকাশ থেকে নিরাপদে ফিরলেন পৃথিবীতে। ফিরে আসার পর প্রথমেই কী পান করতে দেওয়া হয়েছিল শুভাংশুকে? কতক্ষণ পরই বা তাঁকে কিছু খাবার খেতে দেওয়া হবে? আর তারপরই বা কী খাবেন তিনি? চলুন জেনে নেওয়া যাক সম্পূর্ণ নিয়ম।

সাধারণত নাসার মহাকাশ অভিযানের পর যখন কোনও মহাকাশচারী পৃথিবীতে অবতরণ করেন, তখনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা কর্মীরা প্রথমে তাঁদের রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন এবং অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখেন।

ক্যাপসুল থেকে বের করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের পুনঃহাইড্রেশন দ্রবণ (ORS এর মতো পানীয়) দেওয়া হয়। শরীরে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া রোধ করতে লবণ বা ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত জল ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানা যায়। তবে সঙ্গে সঙ্গে কখনই কোনও শক্ত খাবার দেওয়া হয় না।

অবতরণের ১-২ ঘণ্টা পর:যাত্রীদের পরীক্ষা করা হয়ে গেলে, তাঁদের প্রথমে স্যুপ, জুস অথবা তরল খাবার খেতে দেওয়া হয়। মহাকাশযাত্রীর যদি শারীরিক ভাবে সুস্থ বোধ করেন, তাহলে হালকা শক্ত খাবার - যেমন স্যুপ, ফল, অথবা নরম রুটি - দেওয়া যেতে পারে।

৬-১২ ঘণ্টার মধ্যে:যদি যাত্রীরা সুস্থ বোধ করেন এবং কোনও জরুরি চিকিৎসা না থাকে, তাহলে হালকা খাবার বা সাধারণ খাবার সরবরাহ করা হয় এরপরেই। কখনও কখনও মহাকাশচারীরা এই সময় নিজেরাই তাঁদের পছন্দের খাবারের জন্য অনুরোধ করেন।

কেন নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের খাওয়ার দেওয়া হয় না?মহাকাশে মাইক্রোগ্রাভিটিতে, পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফিরে আসার সময় শরীরের তরল ভারসাম্য এবং রক্তচাপের অবনতি ঘটে। মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা নিম্ন রক্তচাপের কারণে ভারী খাবার খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

তাই প্রথমে শরীরকে ইলেক্ট্রোলাইট এবং তরল দিয়ে স্থিতিশীল করা হয়। যদি যাত্রী কঠিন অবতরণের কারণে মহাকাশ অসুস্থতা বা শক ভোগ করেন, তবে তাঁকে কয়েক ঘণ্টার জন্য কেবল তরল খাবার খাওয়ানো হয়।

কী ধরণের খাবার পরিবেশন করা হয়?– ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়– গ্লুকোজ জল– স্যুপ– ফলের রস– সাধারণ ফল (কলা, আপেল)– নরম রুটি

স্বাভাবিক খাবার কখন দেওয়া শুরু হয়?যদি চিকিৎসার অবস্থা স্বাভাবিক থাকে, তাহলে ২৪ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়। শরীরের পুনরুদ্ধার এবং চিকিৎসা সুরক্ষার জন্য এই প্রোটোকলটি মেনে চলা জরুরি।

রাশিয়ায় মহাকাশচারীদের ফিরে আসার পর কী দেওয়া হয়?রাশিয়ায় আবার যখনই কোনও মহাকাশচারী মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসেন, তখন তাঁকে যে জিনিসটি দেওয়া হয় তা অদ্ভুত শোনালেও বেশ মজার। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাবার ও পানীয় দেওয়ার পরিবর্তে ওই দেশে তাঁরা মহাকাশ্চারীকে যা দেয় তা অবাক করার মতো।

তাঁরা মহাকাশ্চারীকে খেতে দেয় রুটি এবং লবণ। যদিও নাসায় এমন কোনও ঐতিহ্য নেই। তাই ভারতের শুভাংশু শুক্লা প্রথমে কোন খাবার ও পানীয় খেতে পাবেন তা জানা মূল্যবান।

আসলে রুশ ঐতিহ্যে, 'রুটি' বলতে খামির মিশ্রিত রুটিকে বোঝায়, সাধারণ রুটি (যেমন চাপাতি বা ফুলকা) নয়। এটি একটি নরম, গুঁড়ো করা এবং বেক করা রুটি, যা সাধারণত গম বা রাইয়ের আটা দিয়ে তৈরি। এটি খামির দিয়ে তৈরি করা হয় এবং তারপর উনুনের আঁচে তা বেক করা হয়। এর একটি শক্ত বাইরের স্তর এবং একটি নরম ভিতরের স্তর থাকে।

রাশিয়ায় রুটিকে "জীবনের ভিত্তি" হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, খামির দিয়ে তৈরি রুটি এখানকার গ্রামগুলিতে প্রধান খাদ্য। একইভাবে, লবণকে পবিত্রতা এবং জীবনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

রুটি এবং লবণ কেন দেওয়া হয়?রাশিয়ায় রুটি এবং লবণ দেওয়া একটি অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রীতি। এটি অতিথিকে স্বাগত, শ্রদ্ধা এবং শুভকামনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

যখন কোনও মহাকাশচারী মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসেন, তখন মাতৃভূমির কোলে ফিরে আসার এবং জীবিত ও সুস্থ থাকার আনন্দে তাঁকে রুটি এবং লবণ দিয়ে স্বাগত জানানো একটি ঐতিহ্য।রাশিয়ায়, বিশেষ অতিথি, সৈন্য, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা বা দেশের জন্য কাজ করা বীরদের সম্মান জানাতে এই রীতি পালন করা হয়।

এই ঐতিহ্য কখন শুরু হয়েছিল?১৯৬০-এর দশকে প্রথম সোভিয়েত মহাকাশচারী ফিরে আসার পর এই ঐতিহ্য শুরু হয়। ইউরি গ্যাগারিনের পর থেকে, প্রতিটি অবতরণের সময় অবতরণস্থলে উপস্থিত কর্মকর্তা এবং স্থানীয়রা রুটি এবং লবণ দিয়ে স্বাগত জানাতেন মহাকাশচারীদের।

ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর, একজন কৃষক মহিলা এবং তাঁর নাতনিই প্রথম তাঁকে রুটি এবং লবণ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে, এটি একটি ঐতিহ্য হয়ে ওঠে।

বর্তমানেও প্রতিটি সয়ুজ অবতরণের সময় রুটি এবং লবণের আচার দিয়ে অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, বরং প্রতীকীভাবে। প্রায়শই অবতরণ স্থানে একটি মেডিক্যাল টিম এবং একটি অভ্যর্থনা দল থাকে।

আবহাওয়া এবং নিরাপত্তা অনুকূল থাকলে, এই আচার খাওয়া হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে ফিরে আসা রাশিয়ানরা যখন তারা স্টার সিটিতে ফিরে আসে তখন তাঁদের প্রায়শই এই অভ্যর্থনা জানানো হয়।

আপেল এবং চা:এর পরে, রাশিয়ায়, মহাকাশচারীদের আপেল বা টাটকা ফল খেতে দেওয়া হয়। রাশিয়ায় চা পান করা একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তাই মহাকাশ যাত্রীদের প্রায়শই গরম চা পান করতে দেওয়া হয়। কখনও কখনও এটি লেবু বা জ্যাম দিয়ে পরিবেশন করা হয়। কখনও কখনও ভদকাও দেওয়া হয়। তবে যদিও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয় না তবে কিছু যাত্রী জানিয়েছেন যে অবতরণের পরের উদযাপনে তাঁরা ভদকা পান করেছেন।