এতে পড়লে মাছ সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। আর ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই প্রাণ হারায়। স্থানীয়রা এই নদীটিকে বলে “শানে-টিম্পিশকা” (Shanay-Timpishka) — যার অর্থ, “সূর্যের তাপে সেদ্ধ নদী”।
বিজ্ঞানীরা এখন নিশ্চিত করেছেন, এটি কোনও বাড়িয়ে বলা গল্প নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যেখানে পৃথিবীর গভীর থেকে উঠে আসা গরম জলধারা নদীর জল এত উষ্ণ করে তোলে। শানে-টিম্পিশকা নদী শুধু তার মারণাত্মক উষ্ণতার জন্যই নয়, বরং তার অবস্থানের জন্যও অনন্য।
advertisement
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই নদীটি এমন এক অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে কোনো আগ্নেয়গিরি নেই। নদীটির নিকটতম আগ্নেয়গিরি বা টেকটোনিক প্লেটের সীমানা থেকে ৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। এই কারণেই বিজ্ঞানীরা বিস্মিত — যেখানে গলিত লাভার কোনো উৎসই নেই, সেখানে এত বেশি তাপ কীভাবে তৈরি হচ্ছে?
এই রহস্যই শানে-টিম্পিশকাকে পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক বিস্ময় করে তুলেছে। নদীটির তাপ চারপাশের আবহাওয়া বা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণে নয়। বিজ্ঞানী আন্দ্রেস রুজো (Andrés Ruzo)-এর গবেষণা অনুযায়ী নদীটি “Deep Hydrothermal Circulation” (গভীর ভূ-তাপীয় প্রবাহ) নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গরম হয়।
এই প্রক্রিয়ায় বৃষ্টি ও ভূগর্ভস্থ জল পৃথিবীর গভীরে প্রবেশ করে, সেখানে গরম পাথরের সংস্পর্শে এসে উত্তপ্ত হয় এবং পরে আবার পৃষ্ঠে উঠে এসে নদীর জল গরম করে। সেই কারণেই শানে-টিম্পিশকা নদী পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় প্রাকৃতিক বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুন- Knowledge Story: কোন দেশে একটিও নদী নেই? বলতে পারলে আপনি জিনিয়াস
যদিও শানে-টিম্পিশকা নদী একটি অসাধারণ ভূতাত্ত্বিক (geological) বিস্ময়, তবুও এটি বন্য প্রাণীদের জন্য এক মারণ ফাঁদ। বিজ্ঞানী আন্দ্রেস রুজো এবং বহু স্থানীয় গবেষণায় এটি নিশ্চিত করা হয়েছে, যে প্রাণীরা নদীর খুব কাছে যায় বা ভুল করে এতে পড়ে যায়, তারা প্রায় কখনও বেঁচে ফিরতে পারে না। সবচেয়ে সাধারণ শিকার হল ব্যাঙ। গবেষণায় দেখা গেছে, তীব্র তাপে মারা যাওয়ার ঠিক আগে তাদের চোখ ঘোলাটে হয়ে যায়, আর তারা ধীরে ধীরে সেদ্ধ হয়ে যায়। এই দৃশ্য স্থানীয়দের কাছে ভয়ের এবং বিস্ময়ের মিশ্র প্রতীক — এমন এক নদী, যা সৌন্দর্য ও মৃত্যুকে একসাথে বহন করে।
