মেদিনীপুর: মেদিনীপুরের ছোট্ট রূপসা। বয়স মাত্র ৭। ২ বছর বয়স থেকেই বিরল স্নায়বিক রোগ এস.এম.এ (Spinal Muscular Atrophy)-তে আক্রান্ত। হাঁটতে চলতে পারে না, এমনকি হাত পা ভালো করে নাড়াতেও পারেনা সে। তবে, পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছে মনে। স্কুলে ভর্তির সময় হয়ে গেলেও, সাধারণ স্কুলে ভর্তি নিচ্ছিলনা ওকে। শেষমেশ শরণাপন্ন হন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই-এর। তিনিই রূপসা কে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। মেদিনীপুর টাউন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে রূপসা। সোমবার থেকে স্কুলে যাচ্ছে রূপসা। মনে খুব আনন্দ! তবে, ৭ বছরের মেয়েকে প্রতিদিন কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল বাবা-মা'র। সেই কষ্টও লাঘব করতে উদ্যোগী হলেন ডিপিএসসি (DPSC)'র চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই। বুধবার বিকেলে রূপসা'র বাবা-মা'র হাতে তুলে দিলেন হুইল চেয়ার। বাবা-মা'রস সঙ্গে ডি পি এস সি-তে এসেছিলেন ছোট্ট রূপসাও। বাবা সুমন মুখার্জি এবং মা সান্ত্বনা মুখার্জি'র সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু-ও পরম যত্নে ছোট্ট রূপসা-কে হুইলচেয়ারে বসিয়ে দিলেন। চোখ ছলছল করে উঠল, সুমন, সান্ত্বনা এবং কৃষ্ণেন্দু সহ উপস্থিত সকলেরই। প্রসঙ্গত, এই এসএমএ (SMA) বা Spinal Muscular Atrophy হল বিরল এক স্নায়বিক রোগ। জন্মগত ত্রুটি বা জেনেটিকাল ডিসঅর্ডার এর কারণে এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। এই রোগের বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই। বয়সের সাথে সাথে শরীরের হাড় এবং স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়। ক্রমেই শক্তি হারাতে থাকে শরীর। ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যদিও, রূপসা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে দেড়-দু'বছর বয়স থেকে। রূপসা'র বাবা সুমন মুখার্জি জানান, \"ওর যখন দেড়-দু' বছর বয়স, তখন বেশ কিছু জটিল সমস্যা দেখা দেয়। আমরা কলকাতার বিখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অপূর্ব ঘোষ-কে দেখাই। উনি তখন ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানেই ধরা পড়ে, রূপসা এসএমএ-তে আক্রান্ত। তারপর থেকেই এই কঠিন লড়াই চলছে।\" তিনি এও জানান, \"সারা ভারতবর্ষে সর্বাধিক ২৫০-৩০০ জন শিশু এবং পশ্চিমবঙ্গে ৪০-৫০ জন শিশু এই রোগে আক্রান্ত। আগে কোনো চিকিৎসা ছিলনা। সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি, এই রোগের ওষুধ ও ইনজেকশন বেরিয়েছে। তবে, খরচ বিপুল। প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে চিকিৎসা করানোর জন্য!\" সুমন মেদিনীপুর শহরের একটি নামকরা অলংকারের দোকানের (জুয়েলারি শপে) কর্মচারী। তিনি এত টাকা পাবেন কোথায়! স্বামীর পাশে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে সান্ত্বনা বলেন, \"ও হাঁটতে চায়, অনেক পড়াশোনা করতে চায়। ওর খুব বুদ্ধি। একবার কোন পড়া কিংবা আবৃত্তি শুনলেই মনে রাখতে পারে। আমার এই মেয়েটার চিকিৎসার জন্য যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি, সংস্থা বা সরকার এগিয়ে আসে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। চেয়ারম্যান স্যার ওকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি যা যা করলেন, সেজন্য আমরা আপ্লুত। উনি বলেছেন ওনার সাধ্যমত পাশে থাকবেন। কিন্তু, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার এগিয়ে না এলে, এই রোগের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়!\" আর, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই বললেন, \"আমাদের অফিসের একজন কর্মী সৌরভ মুখার্জি, এই ঘটনাটি জানানোর পরে আমি যথাসাধ্য উদ্যোগ নিয়েছি। আমি আমার সাধ্যমত করেছি মাত্র, ভবিষ্যতেও যতটুকু পাশে থাকা সম্ভব, থাকবো। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, উনি যেন এই ধরনের শিশুদের সুস্থ করে দেন!\"