দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৫৬ টি বছর। চা বিক্রি করেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। কাঁকসার রথ তলায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ভোর থেকেই সেখানে চা খেতে ভিড় জমান এলাকার মানুষ।
পশ্চিম বর্ধমানঃ লড়াইটা ছিল কঠিন। তবে হার মানেননি তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে চায়ের দোকানে বসেন কাঁকসার সিংপাড়ার বাসিন্দা শিবানী গোস্বামী। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৫৬ টি বছর। চা বিক্রি করেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। কাঁকসার রথ তলায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ভোর থেকেই সেখানে চা খেতে ভিড় জমান এলাকার মানুষ। বাবা মারা যাওয়ার আগেই কোলে তখন ছয় মাসের একমাত্র সন্তান। হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান তার স্বামী। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও তার স্বামীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে বাবা মারা যাওয়ার পর তাই সংসারের হাল ধরতে অবশেষে বাবার চায়ের দোকানে গিয়ে বসেন শিবানী দেবী। এরপর ছেলেকে মানুষ করা, তাকে বড় করে তোলা, তার বিয়ে দেওয়া সবই হয়েছে এই চায়ের দোকান থেকেই। বর্তমানে ছেলে বউ নাতি-নাতনি নিয়ে তার বিরাট সংসার। তবুও গত ৫৬ বছর ধরে একইভাবে নিয়ম করে তিনি সকালে দোকানে আসেন এবং রাত্রে বাড়ি যান। দেখতে দেখতে বয়স তার প্রায় সত্তর ছুঁইছুঁই। তবু আজও জীবন যুদ্ধে হার মানতে চান না তিনি। গত ৫৬ বছর ধরে সাহায্যের হাত কেউ বাড়িয়ে না দিলেও, কিংবা কেউ পাশে না দাঁড়ালেও প্রায় এক বছর হল তিনি বার্ধক্য ভাতা পেতে শুরু করেছেন। এলাকার মানুষ বলেন, শিবানী দেবী সংগ্রাম করে লড়াই করে বেঁচে থাকা একজন মহিলা। তিনি একজন উদাহরণ অন্যদের কাছে। জীবন যুদ্ধের অন্যতম যোদ্ধার নাম শিবানী গোস্বামী। পড়াশোনার গণ্ডি পেরিয়ে মায়ের কাজে হাত লাগান তার ছেলে রামকৃষ্ণ গোস্বামী। গত কয়েক বছর ধরে মাকে সাহায্য করে আসছেন তার একমাত্র ছেলে। ছেলে রামকৃষ্ণ বলেন, মার বয়স হয়েছে তবে তার যতদিন ইচ্ছা তিনি দোকানে আসবেন, দোকান সামলাবেন। তবে বয়স হলে যদি কাজ না করতে পারেন, তবে তিনি বাড়িতে বসেই বিশ্রাম নেবেন। শিবানী দেবীর এই জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।