ছোট ছোট ডিঙি। নেই লাইফ জ্যাকেট। ক্ষমতার তুলনায় দুগুণ এমনকী তিনগুণ পর্যন্ত যাত্রী তুলেই সমুদ্রে ভেসে পড়েছিল শয়ে শয়ে ডিঙি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, রাইট পুলিশের লাঠি - সবকিছু সহ্য করেও দাঁতে দাঁত কামড়ে ছিলেন শরণার্থীরা। কোনও মতে একবার নিজেদের পছন্দসই দেশে পৌঁছতে পারলেই হল। তারপর না হয় শুরু করা যাবে নতুন জীবন। সিরিয়া, লেবানন, থেকে আছড়ে পড়া শরণার্থীদের স্রোতের সেই শুরু।
advertisement
জন্মভূমিতে নেই জীবনের নিরাপত্তা। ভিটেমাটি ছেড়ে, শেষ সম্বলটুকুকে আঁকড়েই ইউরোপে ঠাঁই পেতে জীবন বাজি রাখতেও রাজি ছিলেন শরণার্থীরা। দায় কার? ভার নেবে কে? ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেশিরভাগ সদস্য দেশ হুঙ্কার ছাড়ছিল, নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মেটার শরণার্থীরা। আয়লান ট্রাজেডি পর্বের পর মানবিক মুখ দেখাতে হচ্ছে তাদের। তাই বাধ্য হয়েই ঘোষণা, শরণার্থীদের ভার নিতেই চাই। কিন্তু ক্ষমতা কোথায়? উত্তর নেই। থেমে নেই শরণার্থী স্রোতও।
শরণার্থী বোঝা ঝেড়ে ফেলতে চায় ক্লান্ত ইউরোপ। কিন্তু শরণার্থীদের সে সুযোগ কোথায়? ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেও বুদাপেস্ট সহ তিনটি শহর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রওনা হয়েছেন শরণার্থীরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্তই তো বন্ধ। প্যারিস হামলার পর আর কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ ইউরোপ। বুদাপেস্ট ও লিবিয়া সীমান্তে লাইন ক্রমশ লম্বা হচ্ছে।
সর্বস্ব খুইয়ে যারা নতুন আস্তানার সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকের লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। অনেকেরই হয়নি। আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্তের পর শেষ আশাটুকুও আর নেই। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন বরং জানাচ্ছে, ঘরে ফেরার আর্জি ৷‘ আমরা অনুরোধ করছি, শরণার্থীরা ঘরে ফিরে যান। কোনওভাবেই নতুন করে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই ১৫ লক্ষ মানুষ এসেছেন। তাদের জীবনধারণের ব্যবস্থা কী হবে? আমরা জানি না। তাই বলছি, ফিরে যান।’ এই সাংবাদিক সম্মেলন যখন চলছে, তখন রিফিউজি রিসেটেলমেন্ট কমিশনের প্রধানকে থামিয়ে বলে ওঠেন ই-ইউ কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল, ‘হ্যাঁ, ফিরতে ওদের হবেই। ওদের মধ্যে থেকেই জঙ্গিরা ঢুকে পড়ছে। এটা তো প্রমাণিত। ওরা নিজেদের দেশে ফিরুন। আইএসকে ভয় পাওয়াটা কিছু নেই। ওটা স্রেফ অজুহাত। ওরা ইউরোপে ঢোকার ছুতো খোঁজেন। ’
হ্যাঁ, ছুতোই বটে। গৃহযুদ্ধ, ইসলামিক স্টেটের শাসন আর উন্নত দেশের বিমানহানার মুখে পড়ে থাকাটাই তো বুদ্ধিমানের কাজ। বোকা বলেই তো সর্বস্ত খুইয়ে পাড়ি িদচ্ছেন তাঁরা। মাঝেমধ্যেই আয়লানরা ভেসে উঠছে সমুদ্রেত তীরে। জীবন বাঁচানোর তাগিদ। পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ। এই তাগিদই আপাতত তাড়িয়ে নিচ্ছে বেড়াচ্ছে সব পিছনে রেখে আসা মানুষগুলোকে। ভবিষ্যৎ এখনও দূর অস্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এতবড় সংকট আর আসেনি। তবুও ইউরোপ বলছে, ওটা স্রেফ ছুতো। ওরা আসলে ইউরোপে আসার জন্য পাগল।