এই মুহূর্তে NIA হেফাজতে থাকা নইমাতুল্লা তদন্তকারীদের জেরায় জানিয়েছে, মুসাকে সে ভালভাবেই চিনত ৷ বহুবার হায়দরাবাদে মুসার সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর ৷ সংগঠনের কাজে একাধিকবার মুসাকে টাকা পাঠিয়েছে নইমাতুল্লা ৷
হায়দরাবাদ IS মডিউলে ‘আমির’ নামে পরিচিত এই নইমাতুল্লা ৷ এর আগেই মুসা জানিয়েছিল আইএস মডিউলে সবাইকে কোড নামে ডাকা হয় ৷ যেমন, গোষ্ঠী সদস্য হওয়ার পর মুসার নাম হয়েছিল আবু আল মুসা আল বাঙালি ৷ একইভাবে বর্ধমানের কাঁকসা থেকে আটক পলিটেকনিক ছাত্র আসিফ আহমেদেরও একটি কোড নেম রয়েছে ৷
advertisement
নইমাতুল্লার স্বীকারোক্তির পর এটা স্পষ্ট গোটা ভারতে ছড়ানো আইএস জঙ্গিজালের অন্যতম লিঙ্ক ম্যান মুসা ৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, তামিলনাড়ু, হায়দরাবাদ, এমনকী জম্মু-কাশ্মীরের আইএস জঙ্গিদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল মুসার ৷ খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ধৃত বীরভূমের আবদুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মুসার ৷ মুসা ও আবদুল্লা একসঙ্গে তামিলনাড়ুতে থাকত বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা ৷
খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ধৃত বীরভূমের আবদুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মুসার ৷ মুসা ও আবদুল্লা একসঙ্গে তামিলনাড়ুতে থাকত বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা ৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে নিয়মিত ফোন আসত মুসার কাছে। জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার চার-পাঁচ দিন আগেও সফি আরমারের সঙ্গে কথা হয়েছিল মুসার ৷ হায়দরাবাদ থেকে IS সন্দেহে নইমাতুল্লার গ্রেফতারির পর সিরিয়া থেকে মুসাকে ফোন করে সাবধান করেছিলেন আইএস প্রধান সফি আরমার ৷ সতর্ক করা হলেও বর্ধমান থেকে ধরা পড়ে যায় মুসা।
মুসাকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মুসার আইএসের দিল্লি ও কাশ্মীর মডিউলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল ৷ ২০১৫ সালে বেশ কয়েক মাস দিল্লি ও কাশ্মীরে কাটিয়েছিল মুসা ৷
দুই রাজ্যেই বাড়ি ভাড়া করে এতদিন কাটানোর পিছনে নিশ্চয় কোনও গুরুতর অভিসন্ধি ছিল বলে গোয়েন্দাদের অনুমান ৷ আইএস প্রধান সফি আরমারের নির্দেশেই সে ওই অঞ্চলে কোনও কাজে গিয়েছিল ৷ মুসার কাছ থেকে কাশ্মীর ও দিল্লির বেশ কিছুজন সন্দেহভাজনের যোগাযোগ নম্বর পেয়েছেন গোয়েন্দারা ৷ সেই সূত্রকে কাজে লাগিয়েই ওই অঞ্চলের সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷
মুসার জেরা পর্বে গোটা ভারতে বিস্তৃত আইএস জঙ্গি জালের আভাস পেয়ে শঙ্কিত গোয়েন্দারা ৷ পাঁচ-ছটি ভাষায় পারদর্শী আইএস শীর্ষ কর্তার মুসা ওই অঞ্চলের সক্রিয় আইএস জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করার কাজে গিয়েছিলেন বলেই অনুমান তদন্তকারীদের ৷ গোটা দেশ জুড়ে আইএস কর্মকাণ্ড বেড়ে ওঠায় আশঙ্কিত প্রশাসন ৷
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, জৈয়স-এ-মহম্মদ,আল-কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠগুলির সঙ্গে যুক্ত তরুণ জঙ্গিদের এক ছাতার নীচে নিয়ে আসার প্রচেষ্টার ইঙ্গিত মুসার বয়ানে মিলেছে ৷ গোটা দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে আইএস ৷ নিজেদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে এবং পুরনো জঙ্গি যোগাযোগগুলি ঝালিয়ে নিতেই রিক্রুয়টার হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে মুসা ও তাঁর মতো আরও অনেককে ৷
গত কয়েক মাসে ধরা পড়েছে একের পর এক আইএস সন্দেহভাজন ৷ ভারতে আইএস কার্যকলাপের বাড়বাড়ন্ত এতেই প্রমাণিত ৷ ভারতব্যাপী আইএসের জঙ্গি জালকে প্রকাশ্যে আনতে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে মুসার বয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷
মুসা মামলা নিতে চায় এনআইএ। তবে তার আগে মুসাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এনআইএ। গুলশান হামলায় স্পষ্ট, আইএস-জেএমবি সন্ত্রাসের যৌথ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় উপমহাদেশে। সিরিয়া ও বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা মুসাকে তাই হেফাজতে নিয়ে জেরা করে এনআইএ।
আগামী ২০ জুলাই মুসার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রোদ্রোহিতার মামলা দায়ের করতে চলেছে CID ৷