তবে এটা স্পষ্ট যে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলি সারা বিশ্বের মানুষকে শুধু মিম তৈরি করতে বা ডিনার পার্টির পরিকল্পনায় সাহায্য করতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে না। একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায় কেন Google বা Microsoft-এর মতো সংস্থা জেনারেটিভ এআই বা চ্যাটজিপিটি-এর মতো বটগুলির প্রতি এতটা আকৃষ্ট!
উত্তরটা খুবই সহজ। প্রযুক্তি সংস্থাগুলি একটি নতুন ব্যবসায়িক মডেলের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে। যেখানে বিজ্ঞাপনই একমাত্র ভিত্তি নয়। খুব শীঘ্রই, ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য অর্থ প্রদান করতে হতে পারে। সারা বিশ্বের বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই তাঁদের যাবতীয় অনুসন্ধানের জন্য Google বা Microsoft-এর উপর নির্ভর করে থাকেন।
advertisement
আরও পড়ুন: আপনার হাতের স্মার্টফোনে কতগুলো সেন্সর একসঙ্গে কাজ করে জানেন?
এর আগে Google Drive ড্রাইভ, OneDrive, Dropbox, iCloud বা অন্য ক্লাউড স্টোরেজ যখন লঞ্চ করেছিল, তখনও নির্মাতা সংস্থাগুলি দাবি করেছিল, বিনামূল্যে আপলোড করা যাবে যে কোনও নথি, ছবি, ভিডিও।
এক দশক পরে, প্রযুক্তি এমন জায়গায় পৌঁছে গেল যে মানুষের হাতে হাতে উঠে এল দুর্দান্ত ২০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা-সহ স্মার্টফোন। এই ক্যামেরা একের পর এক ছবি তোলা যায় যার আকার ২০এমবি-র থেকেও বেশি হতে পারে। কিন্তু বিনামূল্যের iCloud, Google Drive-এর মাত্র ৫জিবি থেকে ১৫জিবির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে নিজের ক্রমাগত জমতে থাকা স্মৃতির পাহাড় ধারণ করে রাখতে, একের পর এক তোলা ছবি বা ই-মেল সংরক্ষণ করে রাখতে Google, Apple বা অন্য সংস্থাগুলিকে অর্থ প্রদান করে স্টোরেজ বাড়িয়ে নিতে হচ্ছে।
ফলে সার্চিং-এর ভবিষ্যতও যে এমন হতে পারে তা মনে করা যেতেই পারে। অদূর ভবিষ্যতে, ওয়েব সার্চিং আর বিনামূল্য নাও হতে পারে। অথবা খুব আশাব্যঞ্জক ভাবে বললে বলতে হয়, জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনগুলি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে বিনামূল্যে হতে পারে।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। হিসেব বলছে, Google-এ প্রতিদিন প্রায় ৯ বিলিয়ন জিজ্ঞাসা উঠে আসে। বিনামূল্যে সে সব প্রশ্নের উত্তর দেয় Google, সঙ্গে দেখায় প্রয়োজনীয় নানা তথ্যও। এই ৯ বিলিয়ন অনুসন্ধানের ১ শতাংশও যদি অর্থের বিনিময়ে পেতে হয়, তা হলে এমনদিন অচিরেই আসবে যখন Google পুরো ইউরোপকে কিনে নিতে পারবে। আর এই ভবিষ্যতের ট্রেলার হল ChatGPT, এমনটা বলাই যায়।
আরও পড়ুন - পুরুষের পর্দাফাঁস! Facebook-এর এই গ্রুপে ‘ডার্টি সিক্রেট চালাচালি’ করেন মেয়েরা
কিন্তু মনে রাখতে হবে ChatGPT-ই একমাত্র জেনারেটিভ এআই বট নয়। এর আরও অনেক বিকল্প রয়েছে, যাদের কথা হয়তো এখনও তেমন ভাবে প্রচারের আলো পায়নি। এই সব বট যে শুধু লেখ্য অনুসন্ধানের জন্য জেনারেটিভ এআই, তা নয়। ইতিমধ্যেই এমন অনেক এআই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে যা ছবি এবং ভিডিও তৈরি করতে পারে নিজে নিজে, কৃত্রিম মেধা দিয়ে।
মনে করা হচ্ছে, Google, Microsoft-সহ অন্য সংস্থাগুলি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাদের সার্চ ইঞ্জিনের জন্য একটি ‘ফ্রিমিয়াম’ মডেল তৈরি করবে। যদিও সাধারণ বিজ্ঞাপন-চালিত Google Search বা Microsoft Bing সম্ভবত বিনামূল্যে থাকবে। ChatGPT-এর সাবস্ক্রিপশন পেজের দিকে একবার তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
Google, Microsoft বা অন্যরা সংস্থাগুলি তাদের প্ল্যাটফর্মে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য কী ভাবে অর্থ নিতে পারে সে সম্পর্কে খানিকটা আন্দাজ করে রাখা যেতে পারে।
মনে করা হচ্ছে প্রাথমিক ভাবে কিছু বিনামূল্যে ক্রেডিট দেওয়া হবে সকলকেই। ধরা যাক, জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক Google Search ব্যবহার শুরু করার জন্য Google প্রত্যেককে বিনামূল্যে ১৫ ডলারের ক্রেডিট দিল।
এবার এই অর্থ কোনও গ্রাহক কোন প্রশ্ন করে খরচ করবেন তা তিনিই স্থির করবেন। সেক্ষেত্রে ‘কাল কি বৃষ্টি হবে’ জিজ্ঞাসা করে ওই অর্থ নষ্ট করবেন নাকি ‘হ্যাশড পাসওয়ার্ড প্রিন্ট করার জন্য একটি জাভাস্ক্রিপ্ট ফাংশন’ লিখিয়ে নেবেন সেটা তাঁর বিবেচ্য। তবে দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিতে যে একই রকম প্রয়োজনীয় কম্পিউটিং শক্তি খরচ হবে না তা বোঝাই যায়। তাই গাঁটের কড়িও খরচ হবে প্রশ্নের গুরুত্ব অনুযায়ী।
এবার এই বিনামূল্য তহবিল শেষ হওয়ার মুহূর্তে যদি সংস্থার তরফে অর্থ চাওয়া হয় পরবর্তী উত্তর জানানোর জন্য, তখন তা দিতে অস্বীকার করা মুশকিল। কারণ কৃত্রিম মেধা ততক্ষণে প্রাকৃতিক মেধাকে দেখিয়ে দিয়েছে খুব সহজে নিজের কাজ কী ভাবে সেরে ফেলা যায়। অনেকেই পড়াশোনার কাজে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন বিশেষত গবেষণামূলক কাজে। ফলে তা থেকে বেরিয়ে আসা হয়তো কষ্টের হবে।