তৈরি হয়েছে নতুন এক ধরনের হেডসেট (হেডফোনের মতো পরিধেয়), যার মাধ্যমে মনের কথাও ‘শোনা’ যাবে। তবে এ জন্য যারা হেডসেটটি পরে থাকবে তারাই শুধুমাত্র পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারবে।
গবেষকরা বলছেন, অলটারইগো (AlterEgo) নামের এই হেডসেটটি পরে কেউ মনে মনে কথা বললেই হল, উচ্চস্বরে কথা বলার প্রয়োজন নেই।
advertisement
এই আবিষ্কারের নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অর্ণব কাপুর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের চিন্তা ছিল, আমরা এমন কোনও কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম করতে পারি কি না, যা আরও বেশি অন্তর্মুখী ৷ কোনও উপায়ে যা মানুষ ও মেশিনের মেলবন্ধন ঘটাবে এবং যা আমাদের নিজেদের বোধশক্তির অন্তর্গত বিস্তার মনে হতে পারে?’’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির মিডিয়া ল্যাবে এ সিস্টেম উন্নয়নে কাজ করেন অর্ণব।
অর্ণব এই হেডসেটটিকে ইনটেলিজেন্স-অগমেন্টেশন (জ্ঞান-উদ্দীপন) বা এআই যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি জাপানের টোকিওতে অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যও দেন। যন্ত্রটি চোয়াল ও থুতনি বরাবর পরতে হবে এবং এই সাদা প্লাস্টিক ডিভাইসটির নীচে চারটি ইলেকট্রোড (বিদ্যুৎ পরিবাহী সেল) থাকবে ৷ যেগুলো ত্বক ও স্নায়বিক পেশীর (নিউরোমাসকুলার) সঙ্কেত পাবে। এর ফলে একজন ব্যক্তি মনে মনে কী বললেন তা বুঝতে পারবে যন্ত্রটি। কেউ যখন বলে ওঠে তার মাথায় অনেক কথা আছে, এই যন্ত্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষ শব্দের সঙ্গে বিশেষ সঙ্কেত মিল খুঁজে পাবে, এরপর সে সব কথা কম্পিউটারে বেরিয়ে আসবে।
এমআইটির মিডিয়া আর্টস ও সায়েন্সেসের প্রফেসর প্যাটি মায়েস বলেন, ‘‘আমরা আসলে সেলফোন, ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ছাড়া চলতে পারি না। একইসঙ্গে এ সব যন্ত্রের ব্যবহার অত্যন্ত ঝামেলার। প্রয়োজনীয় কিছু খুঁজতে আমাকে ফোন বের করে পাসকোড দিতে হবে এবং একটি অ্যাপ খুলে সেটাতে কিওয়ার্ড টাইপ করতে হবে। পুরো বিষয়টা আমার মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে যায়।’’
মায়েস, তাঁর ছাত্র অর্ণবসহ অন্যরা স্মার্টফোনের জ্ঞান ও সেবার কিছু ফ্যাক্টর, ইন্টারফেস নিয়ে কাজ করছেন ৷ যাতে দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা আর থাকবে না।
অল্টারইগো যন্ত্রটি দিয়ে ১০ জনের ওপর নিরীক্ষা চালানো হয় এবং এর মধ্যে ৯২ শতাংশ নিখুঁত করে এটি। আর প্রত্যেক ব্যক্তিকে বুঝতে তার ১৫ মিনিট করে সময় লাগে। গুগলের কণ্ঠ রূপান্তর যন্ত্র ৯৫ শতাংশ সঠিক কাজ করে। তবে অর্ণব বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রটিকে আরও উন্নত করে তোলা হবে ৷ কণ্ঠ রূপান্তরকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র যেমন গুগলের অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যামাজনের অ্যালেক্সা অথবা অ্যাপলের সিরির সঙ্গে সমন্বয় করাই অল্টারইগোর মূল লক্ষ্য। মানুষ এ সব যন্ত্রের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই বা নিশ্চুপ থেকেই নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।