প্রীতমের দিকে তাকাতেই অনেকের চোখের জল চলে আসতো। তবে কোনও অবস্থাতেই প্রীতম থেমে থাকেনি। হুইল চেয়ারে বসেই নিজেকে বার বার সেরার সেরা প্রমাণ করতে চেয়েছে। নিখাদ মনের জোর, তাকে পৌঁছে দিয়েছে সফলতার শিখরে। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে হুইল চেয়ার ম্যারাথনে সফল হাওড়া ডোমজুড় দফরপুর বেলাল পাড়ার প্রীতম মেদ্দা।
আরও পড়ুন: বার বার চোখের পাতা কাঁপছে? শুভ অশুভ ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো? কোন সমস্যার লক্ষণ? জেনে নিন
advertisement
ছেলেবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি অগাধ মনোযোগ তার। খেলা পাগল ছেলেটি সেভাবে লেখাপড়ায় মন বসাতে পারেনি। তাই অল্প বয়সেই লেখাপড়া ছেড়ে কাজের দিকে ঝোঁকে সে। খেলাধুলা আর কাজ এই নিয়ে দিব্যি হেসে খেলেই দিন কাটছিল। যদিও দুরন্তপনার কারণে বাবা-মায়ের চোখ রাঙানি তো ছিলই।
তবে যেদিকে মনোযোগ দেয় সেই কাজ হাসিল করাই তার অভ্যাস। সেভাবেই অল্প দিনে গহনায় পাথর সেটিংয়ের কাজ রপ্ত করে নেয়। কাজের ফাঁকে পাড়া ক্রিকেট ফুটবলে যোগদান তো ছিলই। সেই সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা।
সাল ২০১৭ হঠাৎই একটি দুর্ঘটনা, প্রীতমের জীবনে কালো মেঘ নেমে আসে। গাছ থেকে পড়ে স্পাইনাল কর্ড ভেঙ্গে কোমর থেকে পা অসার হয়ে যায়। বহু ডাক্তার চিকিৎসার পরেও সমাধান হয়নি, আসলে এই রোগের কোনও চিকিৎসাই নেই বলে জানিয়েছে প্রীতমের পরিবার। একমাত্র চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি। এভাবেই আড়াই তিন বছর কেটে যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলাতে বন্ধুত্ব হয়, যাদের এমনই সমস্যা রয়েছে। আর এখান থেকেই জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় প্রীতমের। চার বছর আগে, যখন প্রীতমের কাছে উঠে দাঁড়ানোর ভরসা তার ক্রাচ। সে সময়ে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হুইল চেয়ার ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছিল বন্ধুর থেকে ধার করা হুইল চেয়ার নিয়ে। শুধুমাত্র মনের জোর এই সেবার প্রথমবার হুইল চেয়ার বসেই ম্যারাথনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নিয়েছিল।
এই কয়েক বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪-১৫ টি ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে একাধিক সফলতা। কোথাও দ্বিতীয় কোথাও তৃতীয়। হুইল চেয়ার নিয়ে ট্রেনে বাসে চেপে ম্যারাথনের যোগ দিতে একাই পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ম্যারাথনে একের পর এক সফলতা আরও বেশি করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। পাশাপাশি পাড়ায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ক্রিকেট কিংবা ব্যাডমিন্টনে খেলে দিনের বেশ কিছুটা সময় কাটে তার।
পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থা সেভাবে স্বাচ্ছল নয়। স্পোর্টস হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্য নেই। কিন্তু প্রীতমেরে চোখে রয়েছে অগাধ স্বপ্ন, বাংলা তথা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে সে। জীবনে পিছিয়ে পড়া বলে কিছু নেই। যে অবস্থায় নিজের কাছে যা সম্বল তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। সেই ভাবনা থেকেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বলেই জানিয়েছেন, প্রীতম।
রাকেশ মাইতি