চার বছর আগের লন্ডন অলিম্পিকে সাইনা নেহওয়ালের বিভীষিকা হয়ে উঠেছিলেন ওয়াং ইহান। রিওতে নামার আগেও প্রত্যাশার লাইমলাইট ছিল সাইনাকে ঘিরে। কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই গ্রুপ পর্যায়ে থেমে যায় হায়দরাবাদের বড় মেয়ের দৌড়। আর হাঁটুর চোট সাইনাকে গিলে ফেলার ফোকাসটা গিয়ে পড়ে সিন্ধুর ওপর। রিওতে পদক ভারতের কাছে মরীচিকা ছিল একাদশ দিন পর্যন্ত। একইসঙ্গে চাপটাও দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে দগদগে বদলার জ্বলুনিতে। কয়েক মাস আগেই ডেনমার্কে ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে জিতেছিলেন সিন্ধু। কিন্তু অলিম্পিকের মঞ্চটাই যে আলাদা। বিশ্বের ৬-নম্বরের বিরুদ্ধে সিন্ধু অবশ্য ১২৫ কোটিকে নিরাশ করেননি। কিন্তু কোয়ার্টারের হার্ডল পেরোতেই তাঁর ছায়ার মতই দীর্ঘ হয়েছে আরও আরও প্রত্যাশা।
advertisement
সিন্ধুর এর পরের স্টেশন ছিল বিশ্বের ২-নম্বর। জাপানের নজুমি ওকুহারা। যাঁর বিরুদ্ধে সিন্ধুর মুখোমুখি রেকর্ড ছিল ১-৩। রিওয়ে রওনা দেওয়ার আগে একটানা ২৩টা টুর্নামেন্ট খেলেছেন পুসারেলা ভেঙ্কট সিন্ধু। হায়দরাবাদের দুই মেয়ের প্রস্তুতির রোডম্যাপটাও ছিল আলাদা। সাইনা যখন গোপীচাঁদকে ছেড়ে প্রকাশ পাড়ুকোন-বিমল কুমারের উপর আস্থা রেখেছিলেন, সেখানে গোপীর অ্যাকাডেমির বাজি ছিলেন শ্রীকান্ত-সিন্ধুরা। পুরুষদের ড্র থেকে শ্রীকান্তের লড়াই থেমে যাওয়ার পর শুধু গোপীর নয়, গোটা দেশের প্রত্যাশার নাম ছিল সিন্ধু।
কিন্তু সিন্ধু এখানেই আলাদা। চাপের ম্যাচেই কেরিয়ারের সবচেয়ে আগ্রাসী খেলা বেরিয়ে এল তাঁর র্যাকেট থেকে। ওকুহারার বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি প্রথম গেম স্নায়ুর দখলে বের করলেন। দ্বিতীয় গেমে বিষাক্ত হয়ে উঠল তাঁর ক্রসকোর্ট, ব্যাকহ্যান্ড স্ম্যাশ। নেট-প্লে-তে নিখুঁতভাবে কাজে লাগালেন উচ্চতার অ্যাডভান্টেজ। ২১ বছরের হায়দরাবাদের মেয়ে আর অলিম্পিক সোনার মাঝে এখন একটাই নাম। বিশ্বের একনম্বর স্প্যানিশ মেয়ে ক্যারোলিন মারিন। সোনা আসুক বা না আসুক, এটাই মেয়েদের ব্যাডমিন্টনে ভারতের সবচেয়ে বড় মাইলস্টোন। আসলে ২০১৬-র রিও শুধু পদকের জন্য নয়। সাইনার ছায়া পেরিয়ে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনকে পৌঁছে দিল সিন্ধু সভ্যতার রোদ্দুরে।