সুযোগ পেলেই নিজেদের প্রমাণ করেছে মরক্কো। অ্যাটলাস লায়ন্সের চলতি বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে অনেকেই চমকে উঠছেন। ফ্লুক বলেও দাবি করা হচ্ছে। অনেকে আবার এই সাফল্যের রহস্য খুঁজতে ইতিহাসের পাতায় ডুব দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ফরাসি রক্তের স্বাদ পেতে মরিয়া মরক্কোর সিংহরা! ম্যাচ নয়, যুদ্ধ বলছেন কোচ ওয়ালিদ
তথ্য বলছে, মরক্কোর এই ফুটবল উত্থান গুরুত্বপূর্ণ ২টি পরিকল্পনার ফসল। ২০০৯ সালে রাজধানী রাবাট শহরের ঠিক বাইরে চালু হয়েছিল আধুনিক ফুটবল একাডেমি। যেখানে রয়েছে ৪টি পাঁচতারা হোটেল। আটটি আধুনিক মাঠ। তবে মরক্কো ফুটবল পাল্টেছে ২০১৪ সালের পর থেকে। সৌজন্যে মরক্কো ফুটবল ফেডারেশনের- “bring back talents belonging to the soil” মডেল।
advertisement
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিভা চিহ্নিত করার জন্য প্রতিনিধি রেখেছে রয়্যাল মরক্কান ফুটবল ফেডারেশন। বিদেশে জন্মানো দেশীয় বংশোদ্ভূত প্রতিভাবান কিশোরদের মরক্কোর হয়ে খেলার জন্য উৎসাহিত করে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
এই পথেই মরক্কো পেয়েছে হাকিম জিয়াসকে। নেদারল্যান্ডসে জন্ম। পেশাদার ফুটবলে পা রাখার সময় দু’দেশের ফুটবল সংস্থার সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এক রকম দরাদরি করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জন্মভূমিকে ছেড়ে বেছে নিয়েছেন মাতৃভূমিকে।
আম্রাবতও জুনিয়র পর্যায়ে নেদারল্যান্ডসের হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেললেও পরে বেছে নিয়েছেন মরক্কোকে। গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনু কানাডায় জন্মেছেন। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালিতে জন্ম নেওয়া ফুটবলাররাও বিশ্বকাপে খেলছেন মরক্কোর হয়ে।
হাকিমির বেড়ে ওঠাও মাদ্রিদের রাস্তায়, দারিদ্রকে সঙ্গী করে। বিভিন্ন দেশে ফুটবল শুরু করে তাঁরা পরে মরক্কোতে এসেছেন। ফলে এইভাবে মিলেছে বিভিন্ন দেশের ফুটবল ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। বর্তমান কাতার বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মধ্যে ১৬ জন ফুটবলারই এইভাবে খুঁজে আনা প্রতিভা।
প্রত্যেকেই ইউরোপের বড় ক্লাবে খেলেন। হাকিমি প্যারি সাঁ জায় নেইমার, মেসিদের সতীর্থ। বাকিরাও ইউরোপীয় ফুটবলের চেনা মুখ। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, এই দল তৈরি হয়েই কাতারে এসেছে। তার ওপর হাকিমিদের বাড়তি ভরসা দিচ্ছে গ্যালারির দর্শক।
আরও পড়ুন- মেসির হাতেই বিশ্বকাপ দেখতে চান লুকা ! অবসর নয় এখনই, জানিয়ে দিলেন ক্রোয়েশিয়া অধিনায়ক
মরক্কোর মতো আরবি ভাষায় কথা বলা কাতারের মানুষ দল বেঁধে সমর্থন করছে মরক্কোকে। ৯০ মিনিট জুড়ে একই ছন্দে সমর্থন কটা দেশ আর পাচ্ছে কাতারে? ফুটবল মাঠে শুধু নয়, দেশের হয়েও একটা লড়াই লড়ছে মরক্কো। আসলে মরক্কো মানে শুধুই ক্যাসাব্লাঙ্কার রোমান্টিকতা নয়। দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার ছবিও রয়েছে। জয়ের উল্লাসে রয়ে যায় জমানো ক্ষোভ।
বিশ্বকাপ যেন দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াই। তাদের ওপর শাসন করা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে। মরক্কোর ইতিহাস বলছে পঞ্চাশ দশকের শুরু থেকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, এই দীর্ঘ সময়ে মরক্কোর মাটিতে উপনিবেশ গড়েছিল পর্তুগাল, স্পেন ও ফ্রান্স।
কাকতালীয় হলেও বিশ্বকাপের নকআউটে স্পেন-পর্তুগালকে হারিয়ে এবার ফ্রান্সের সামনে মরক্কো। বাকি ২ ঔপনিবেশিকদের হারিয়ে বদলা নিয়েছে মরক্কো। এবার কি পালা ফরাসিদের! সাবধান দেশঁর দেশ। কোমর বাঁধছে মরক্কো।