আইএসএলের ইতিহাসে প্রথমবার হারের হ্যাটট্রিক মোহনবাগানের। ফলে জোরালো হচ্ছে কোচ পরিবর্তনের হাওয়া। ম্যাচ শেষে আবারও মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দোর বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান। কেরলের বিরুদ্ধে মোহনবাগান দাপটের সঙ্গে খেললেও গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ হল বাগান আক্রমণ ভাগ। উল্টে খেলার শুরুতে প্রতি আক্রমণণে ৯ মিনিটে গোল করেন কেরলের দিমান্তাকোস দিমিত্রিওস। সেই গোলেই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ হয়। শুরু হয়েছিল মুম্বইয়ের মাটিতে হার তারপর গোয়া এবং এবার কেরালা, একটি অ্যাওয়ে ও দুটি হোম ম্যাচে পরাজয় আইএসএল চ্যাম্পিয়নদের হারের হ্যাটট্রিকের লজ্জায় ডুবিয়ে দিল।
advertisement
এদিন কেরলের হয়ে গ্রিসের স্ট্রাইকার ম্যাচের ৯ মিনিটে সবুজ মেরুন রক্ষণকে টলিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল করে যান। চলতি আইএসএলে সাতটি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে সবার উপরে রয়েছেন কেরল ব্লাস্টার্সের নাম্বার নাইন। ম্যাচের আগেই বাগানের চিন্তা ছিল রক্ষণ। আনোয়ারের চোট পাওয়ার পর থেকেই বাগান ডিফেন্স নড়বড়ে। তাই ঘরের মাঠে কেরালার বিরুদ্ধে ফুটিফাটা রক্ষনকে দুর্ভেদ্য করাই ছিল জুয়ান ফেরান্দোর চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ইউস্তে, শুভাশিস, সুমিত রাঠি, আশিস রাইয়ে গড়া সবুজ মেরুন রক্ষণ মজবুত হল কই? চোট আঘাত কার্ড সমস্যায় জেরবার মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট রক্ষণে বারবার জুটি বদল যে বোঝাপড়ায় সমস্যা তৈরি করছে তা বোঝা গেল।
আরও পড়ুন– ২০২৩-এ আর জাঁকিয়ে শীতের সম্ভাবনা নেই, নতুন বছরের শুরুতেই কি পারদ পতন? জেনে নিন
কেরলের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝড় তুলে রক্ষণের সমস্যা ঢাকতে চেয়েছিলেন ফেরান্দো। হুগো বুমোস মাঝমাঠ থেকে বল যোগানোর ভার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফরাসি মিডফিল্ডার পুরো নব্বই মিনিট জুড়ে শুধু বল নিয়ে কয়েকবার দৌড়লেন নিজের দায়িত্ব পালনে করতে ব্যর্থ হলেন। ফলে জেসন কামিন্স এবং পেত্রাতোসকে বল পাওয়ার জন্য বারবার নীচে নেমে আসতে হল। আর অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। ৬০ মিনিট মাঠে ছিলেন কামিন্স কিন্তু উপস্থিতি বোঝা গেল জার্সির নাম্বারে। ফলে কাজ সহজ হয়ে যায় কেরলের ডিফেন্ডারদের।
কেরল গোল সংখ্যা প্রথমার্ধে বাড়িয়ে ফেললে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। ঘানার স্ট্রাইকার পেপরাহ দু’বার সবুজ মেরুন রক্ষণের তালা খুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজটি করতে ব্যর্থ। প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে মোহনবাগান সুপারজায়ান্টের প্রথম শট ম্যাচের ৪৯ মিনিটে। তবে প্রথম হাফে পিছিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম সেকেন্ড থেকে মোহনবাগান অনেক বেশি আক্রমনাত্মক ফুটবল খেললো। প্রান্ত বদল করে হুগো বুমোস অনেক বেশি নড়াচড়া করলেন। ফলে সবুজ মেরুন দাপট বাড়ল। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে বারবার ব্যর্থ হলেন বাগান স্ট্রাইকাররা। কেরালা রক্ষনে মিলোস ড্রিনিসিক, প্রীতম কোটাল, নাওচা এবং লেসকোভিচ চিনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রতিমুহূর্তে প্রতি আক্রমণে সবুজ মেরুনকে ভাঙার চেষ্টা করলেন। সবুজ মেরুন আক্রমনের চাপ সামলে মাঝমাঠে রাহুল কে পি, দানিশ ফারুক,মহম্মদ আইমেন,মহম্মদ আজহাররা ঠান্ডা মাথায় নিজেদের কাজটা করে গেলেন।
যদিও হুগো বুমোসের দুই প্রান্ত বদল করে দৌড়, কিয়ান নাসিরির ছটফটানি,পরিবর্ত হিসেবে নামা মনবীরের আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখে মনে হচ্ছিল সমতায় ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু গোল করে ফেলা এবং গোলের সুযোগ তৈরি করার মধ্যে অনেক পার্থক্য থেকে যায়। ফলে এদিন গোলটা আর হল না। উল্টে খেলার শেষ দিকে মরিয়া বাগানের ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে নিশ্চিত গোল করে ফেলছিল কেরল ব্রিগেড। কিন্তু রাহুল কেপি শেষ বেলায় সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে এবং বিশাল কাইথ রক্ষাকর্তা না হলে ব্যবধান কেরলের পক্ষে আরও বাড়াতে পারত। মুম্বই সিটি এফসি-র পরে মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট,আইএসএলের দুই বিত্তশালী দলকে হারিয়ে ১২ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে উঠে গেল কেরল ব্লাস্টার্স। আর বছর শেষে আইএসএলে বিরতিতে যাওয়ার আগে হারের হ্যাটট্রিকে মোহনবাগান ১০ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে।
