অনেক ছেলে মেয়ে শালিনীর মতো স্বপ্ন দেখে এবং পূরণ করে। কিন্তু শালিনী এই পুরো ভিড় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। শালিনীর হাত-পা দুটোই নেই। তা সত্ত্বেও শালিনী শুধু দৌড়ানোর স্বপ্ন দেখেননি, পূরণও করেছেন। শালিনী সরস্বতীর জীবন কখনই সহজ ছিল না। শালিনীর বিয়ে হয়েছিল প্রশান্তের সঙ্গে। শালিনী এবং তাঁর স্বামী ২০১৩ সালে কম্বোডিয়ায় তাঁদের বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করার পর খুশি হয়ে ভারতে ফিরেছিলেন। গর্ভবতী ছিলেন তিনি সেই সময়। ফলে আনন্দের উপলক্ষ ছিল। কিন্তু নিয়তি তাদের জন্য এক অন্যরকম দুঃখের প্লট প্রস্তুত করে রেখেছিল।
advertisement
কম্বোডিয়ায় থাকার সময় শালিনীর হালকা জ্বর হয়েছিল। কিন্তু দেশে ফেরার পর সেই জ্বর তীব্র হয়ে ওঠে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে ভাবলেন, বোধ হয় ডেঙ্গু হয়েছে। চেক-আপ হয়েছিল। চিকিত্সক দেখেন, শালিনীর শরীরে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়েছে। ধীরে ধীরে শালিনীর হাত পায়ে পচন ধরতে শুরু করে। এই সংক্রমণ ১০ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের হয়।
শালিনী সরস্বতী বেশ কয়েকদিন আইসিইউতে ছিলেন। তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। চিকিৎসা চলাকালীন শালিনী তাঁর সন্তানকে হারিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। শেষ পর্যন্ত শালিনী বেঁচে যান। কিন্তু সেই সময় তাঁর শরীরের অনেক অংশ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে তাঁর প্রাণশক্তি তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে। বদলে তাঁকে দুই হাত ও দুই পা হারাতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন- স্পেশাল ব্রাঞ্চের তল্লাশি ইডেনে, মাছি গলার সুযোগ নেই ক্রিকেটের নন্দন-কাননে
শালিনী একটা সময়ে পায়ে নেইলপলিশ লাগাতে খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস তাঁর পা কেড়ে নেয়। কিন্তু তিনি আশা ও সাহস হারাযননি। ২০১৪ সালে প্রস্থেসেস ব্যবহার করে কৃত্রিম পা পেলেন শালিনী। 'নতুন' পা ব্যবহার করে অনুশীলন শুরু করেন এবং আবার হাঁটা শুরু করেন।
শালিনী নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি ব্লেড রানার হিসাবে দৌড়ানোর অনুশীলন করতে থাকেন। কোচ বিপি আয়াপ্পার অধীনে তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি প্রতিদিন ৯০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতেন। ট্রেনিং সেশন তাঁর জন্য সত্যিই কঠিন ছিল। কিন্তু শালিনী সব কিছুর মুখোমুখি হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। দুবছরের কঠোর প্রশিক্ষণের পর শালিনী অবশেষে ব্যাঙ্গালোরে TCS ওয়ার্ল্ড ১০ কিমি হাফ ম্যারাথন দৌড়তে সক্ষম হন।
আরও পড়ুন- সানিয়া মির্জার সঙ্গীনীকে 'গায়েব' করে দিল চিন! যৌন অত্যাচারের অভিযোগই কি কাল হল?
শালিনী একটি জার্মান কোম্পানির কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণে রানিং ব্লেড কিনেছিলেন। শালিনীর পরের লক্ষ্য, প্যারালিম্পিকে অংশগ্রহণ করা। শালিনীও এক সময় ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পীও ছিলেন।
