খেলার মাঠের বাইরে এই শহরের রীতি, রেওয়াজ, আদব-কায়দায় বাদশা-কে রপ্ত করিয়েছিলেন যিনি, তিনি কাইজার স্ট্রিটের পিকে ব্যানার্জি। টেলিফোনে পিকের শারীরিক অবস্থার কথা শুনে তাই মন চঞ্চল হয়ে ওঠে বাদশার। হলেনই বা তিনি বাদশা! মন তো তারও পোড়ে। ফোনের ওপারে কয়েক সেকেন্ডের নিস্তব্ধতা, নীরবতা। নিজেকে সামলে নিতে কয়েকটা মুহূর্ত। তারপরেই গড় গড় করে বলতে থাকেন একটার পর একটা ঘটনা। ঘটনা তো নয় যেন ফ্রেমে বাঁধানো ময়দানের সোনালী মুহূর্ত। বাদশার স্মৃতিতে ভেসে ওঠে চার দশক আগের রোভার্স, ফেডারেশন কাপ। পিকে স্যার সেদিন কিভাবে তাতিয়ে ছিলেন এক আনকোরা, একরোখা, প্রতিভাবান ইরানি যুবককে। বলতে বলতেই গলা ধরে যায় বাদশার। মনে পড়ে যায় সেদিনের কত কত আনটোল্ড স্টোরি। শেষ বেলায় তাই ফোন রাখার আগে বিড়বিড় করে ওঠেন, "ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল আমাদের মধ্যে। দোষটা ওর ছিল না। আমারও দোষ ছিল না। সবটাই পরিস্থিতি।"
advertisement
আরও পড়ুন - ইলিশপ্রেমীদের কাছে জবর খবর! এখনই বাজারে দেদার মিলছে গঙ্গার ইলিশ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয়েছেন বাদশা। সেদিনের গনগনে মজিদ আজ শান্ত, স্নিগ্ধ। আসলে মজিদ তখন পড়ন্ত বেলায়। একটা সুযোগের জন্য বাদশা তখন কলকাতার ক্লাবের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। ক্লাবকর্তাদের অনুরোধে দাপুটে পিকে স্যার সেদিন মজিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু সই করার সবুজ সংকেত টা সেদিন মেলেনি। ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ সুযোগটা পাননি বাদশা। প্রিয় চার দশকের ব্যবধানেও সেই দিনটা ভোলেননি মজিদ বাসকর। তাই হয়তো আজও পিকে স্যারের ওপর চাপা অভিমান তার। তবু ফোন রাখার আগে বলতে ভুললেন না, "ভারতে যেসব ফুটবল কোচেদের দেখেছি, তাদের মধ্যে পিকে সেরা ছিলেন। খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন উনি। ওনার জন্য প্রার্থনা করব। পিকে স্যার-কে আমার শুভেচ্ছা জানাবেন।" ফোন রেখে দেন বাদশা। পিকে কী জানবেন কখনও তার ছাত্রের অভিমানের কথা? বাইপাস লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতালে তিনিও যে আজ এক অসম লড়াইয়ের সঙ্গী।
PARADIP GHOSH