রহিম স্টার্লিং কখনও কল্পনাও করেননি যে তিনি একদিন ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলে খেলবেন বলে। কল্পনাহীন জীবন তার এত দুর এগিয়ে যাবে বলে। বড় হওয়ার গল্প হার মানাবে সিনেমাকেও। জীবন সংগ্রামের প্রতিটা পাতায় পরীক্ষা দিয়ে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলার মানুষের বেঁচে থাকার অক্সিজেন'। যেন জীবন্ত দলিল। এই ফুটবলারদের জীবনের গল্প জানতেই তো ভালবাসেন মানুষ। ২৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার জন্মেছিলেন জামাইকায়। যখন মাত্র দু বছর বয়স, গুন্ডাদের হাতে খুন হয়েছিলেন রহিমের বাবা শাকিল।
advertisement
দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই চালাতে হয়েছে ছোটবেলা থেকেই। মা ছোট রহিমকে দেশে আত্মীয়দের কাছে রেখে চলে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে। জানতেন বাবা হারানোর ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে গেলে জামাইকায় পড়ে থাকলে হবে না। স্কুলে বাবার নামের পাশে জায়গা খালি রাখতে হয়েছিল। মা ইংল্যান্ডের পাড়ি দেওয়ার বছর খানেক পর রহিম এবং তাঁর বোন চলে আসেন ইংল্যান্ডে। উত্তর লন্ডনে একটি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জায়গায় থাকতে শুরু করেন। কিন্তু ফুটবল খেলার ইচ্ছে ছাড়তে পারেননি।
জামাইকায় সন্ধ্যা নামলে খেলতে পারতেন না বন্দুকবাজদের হুমকির জন্য। যখন তখন ছুটে আসত গুলি। লন্ডনে সেই সমস্যা ছিল না। যখন রহিমের ১৫ বছর বয়স থাকার জায়গা থেকে দেখতে পেতেন নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন একদিন খেলতে হবে ওই মাঠেই। চোখে পড়ে গেলেন ভারন হাউস স্পেশাল স্কুলের শিক্ষক ক্রিস বেসচির। রহিমের অসাধারণ প্রতিভা তখনই চোখে পড়েছিল এই ব্রিটিশ ভদ্রলোকের।
মাত্র ১২ বছরের ছেলেটিকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সঠিকভাবে এগোলে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানো সময়ের অপেক্ষা। আর নিজের লক্ষ্য থেকে সরে গেলে কোনদিন মায়ের এবং বোনের জীবনে উন্নতি আনতে পারবেন না। বাথরুম পরিষ্কার করেই কাটাতে হবে জীবন। মেন্টর ক্রিসের কথা অমান্য করেননি রহিম। প্রথমে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স, কয়েক বছর পর লিভারপুল এবং তারপর রেকর্ড অর্থে সই করেন ম্যানচেস্টার সিটিতে।
এখন ভারতীয় টাকার বিচারে মাসে ৮৭ কোটি বেতন পান তিনি। মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ফেরারি থেকে শুরু করে তাঁর গ্যারেজে রয়েছে ৮ টি গাড়ি। নিজের মাকে উপহার দিয়েছেন আলাদা একটি বাড়ি। আত্মীয়দের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দিয়েছেন। বান্ধবী এবং দুই সন্তান নিয়ে এখন সুখী পরিবার তাঁর। কিন্তু ছোটবেলার সংগ্রামের দিনগুলো চোখের সামনে ভাসে।
গলি থেকে রাজপথে উঠেও আজও সেই সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাসী ইংল্যান্ডের তারকা ফুটবলার। এই ইউরো কাপে তিনটি ম্যাচেই গোল করেছেন। স্পর্শ করেছেন গ্যারি লিনেকরের রেকর্ড। জার্মান বধ করার পর ইংলিশ মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে প্রশংসার ছড়াছড়ি। একদিন যে দেশে সব হারিয়ে শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, আজ সেই ইংল্যান্ডের মহানায়ক হয়ে উঠেছেন তিনি। সত্যি ! বড় বিচিত্র ফুটবল।