তিন বছর আগে এসেছিল শতাব্দীর অন্যতম বড় ধাক্কা—COVID মহামারী। কোভিড পরবর্তী সময়ে মানুষ তখন নতুন করে জীবনধারার উপর গুরুত্ব দিতে শুরু করে—প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর জোর দিয়ে শারীরিক কসরতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে। সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পূর্ব রেল এক অভিনব উদ্যোগ নেয়, যাতে তরুণ প্রজন্মর মধ্যে ক্রীড়াভ্যাস গড়ে তোলা যায়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, বেহালা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে একটি ক্রিকেট আকাদেমি উদ্বোধনের মাধ্যমে এই প্রয়াস শুরু হয়।
advertisement
উদ্যোগটি ভারতীয় রেলের দীর্ঘদিনের ক্রীড়া অনুরাগের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বারা ঘোষিত ‘খেলো ইন্ডিয়া, খেলো’ কর্মসূচির বাস্তব রূপায়ণ। লাভের লক্ষ্য নয়, বরং বাজারের তুলনায় অনেক কম ফি ধার্য করা হয় এবং রেল কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য অতিরিক্ত ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। দক্ষ প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এই আকাদেমি প্রতিভাবান কিশোরদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। স্থানীয় মানুষের সাড়া এতটাই ব্যাপক হয় যে অল্প সময়েই আকাদেমির আসন পূর্ণ হয়ে যায়।
‘উৎকৃষ্টতা’কে মূলমন্ত্র করে শুরু হওয়া এই প্রচেষ্টা দ্রুত ফল দিতে শুরু করে—
• ওয়াজেদ হোসেন অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।
• শুভঙ্কর দে বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগে কলকাতা টাইগার্স দলের হয়ে খেলেন।
• একাডেমির অনূর্ধ্ব ১৫ দল সি.এ.বি টুর্নামেন্টে শীর্ষ স্থান অর্জন করে।
এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে, পূর্ব রেল দ্রুত তার ক্রীড়া কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে। শীর্ষ মানের পরিকাঠামো ও প্রচুর ক্রীড়া সম্ভাবনার ভিত্তিতে বাস্কেটবল ও সাঁতার আকাদেমি চালু করা হয়।
• সানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় টানা তিন বছর ধরে ঝাড়খণ্ড রাজ্য টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে শীর্ষস্থান ধরে রাখেন।
• সোহম বসু রায় পূর্বাঞ্চল সি.বি.এস.ই টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
• বাস্কেটবলে, সমায়েত্রী সাহা, ঐশী পাত্র ও অয়ন দে জাতীয় পর্যায়ে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন।
ঘোলসাপুর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সাঁতার ও ডাইভিং আকাদেমিতে রয়েছে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা। ডাইভার শুভম হোড় ও অভ্র সর্দার ইতিমধ্যে জাতীয় প্রতিযোগিতায় রুপো জিতেছেন।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক সংযোজন হল ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে চালু হওয়া ‘লক্ষ্য’ দাবা অ্যাকাডেমি, যেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার-সহ অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত প্রশিক্ষণ চলছে।
পূর্ব রেলের ক্রীড়া আকাদেমিগুলো অনন্য করে তুলেছে তাদের নিখুঁত তত্ত্বাবধান, ব্যক্তিগত মনোযোগ, খেলাভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন, কঠোর অনুশীলন, নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ এবং তুলনাহীন পরিকাঠামোর সমন্বয়।
এই অ্যাকাডেমিগুলির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল, যুব সমাজের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা। সংখ্যা কখনওই পূর্ব রেলের উদ্দেশ্য ছিল না, তবুও ৭০০-র বেশি প্রশিক্ষণার্থীর উপস্থিতি এই আকাদেমিগুলোর জনপ্রিয়তা, আস্থা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যেই অর্জিত বিশ্বাসের জ্বলন্ত প্রমাণ।