#মূর্শিদাবাদ: নাগরিকত্ব আইন চালু হোক চাননা মুর্শিদাবাদের তালাকপ্রাপ্ত মহিলারা। এই আইনের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছেন। কারণ, তালাক প্রাপ্ত হওয়ায় তাঁদের স্বামীর ঘর ছেড়ে আসতে হয়েছে। তাঁদের কোনও সঠিক নাগরিকত্ব কাগজ নেই। তার ফলে আশঙ্কায় ভুগছেন মুর্শিদাবাদের কয়েক লক্ষ তালাকপ্রাপ্ত মহিলারা।
তিন তালাক বিল পাস হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের তালাকপ্রাপ্ত মহিলারা। তবে তিন তালাক বিল পাস হলেও কতটা তা কার্যকরী হবে তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন রকেয়া উন্নয়ন সমিতির সদস্যরা। কিছুদিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও মুর্শিদাবাদে কিন্তু তিন তালাকে ছেদ পড়েনি। থানাতে অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ সংগঠনের সদস্যদের।
advertisement
ডোমকলের শ্রীপতিপুর গ্রামে বাপের বাড়িতে আশ্রিত বিলকিস খাতুন দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বিড়ি বেঁধে জীবন নির্ধারণ করছেন। বছর ছয়েক আগে একই গ্রামে রাহুল সেখের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। দর্জির কাজ করে সংসারে দিন কাটছিল ভালই। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসারে কোনও অশান্তি ছিল না। কিছুদিন পর হঠাৎই পাশের গ্রামে আবারও বিয়ে করেন রাহুল। আর তারপরই তিন তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন বিলকিসকে। এরপর নুন আনতে পান্তা ফুরায় বাপের বাড়ির সংসারে ছেলে মেয়েকে নিয়ে উঠে আসেন বিলকিস। স্বামীর বিরুদ্ধে ডোমকল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে বহরমপুর কোর্টে কেস চললেও যেতে আসতে যেন লড়াই করার ধৈর্য্যটাই হারিয়ে ফেলেন বিলকিস। বলেন, ‘‘ছেলে মেয়ে দু’টোর মুখে ভাত দেব না কোর্টে কেস চালাবো। আর লড়াই করতে পারছি না। তিন তালাক বন্ধ হয়েছে শুনে ভাল লাগছে। আমাদের মত গরীব মেয়েরা যাতে আইনের সুযোগটা পায় তা যেন দেখে সরকার। এরইমধ্যে নাগরিকত্ব বিল পাস হয়। আমাদের কাছে কোন ডকুমেন্টস নেই। কার পরিচয় দেবো। সংসার চালাবো না এই সমস্ত জোগাড় করবো ।’’
একই অবস্থা মিনারা বেগমের। জলঙ্গীর ফরিদপুরে বিয়ে হওয়ার পর ছেলে ও এক মেয়ে যখন বেশ বড় সেই সময় স্বামী মনিরুল মালিক বিয়ে করে নিয়ে আসেন আরও একটি মেয়েকে। বছরখানেক অত্যাচার সহ্য করে সংসার করলেও তারপরই একদিন তিন তালাক দিয়ে বের করে দেওয়া হয় মানোয়ারাকে। দুই সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে অন্য বাড়িতে কাজ করে দিন কাটাচ্ছেন মানোয়ারা। বরমপুর কোর্টে কেস চলছে খোরপোষের। তিন তালাক বিল সংসদে পাস হওয়া কথা জানেন না মানোয়ারা। বলেন, ‘‘খাতা কলমে অনেক কিছুই আইন হয় কিন্তু গরীবদের জন্য কিছুই নয়। আমাদের জীবনটা দু'মুঠো ভাতের জন্য কেবলমাত্র লড়াই করতে করতে কেটে যাচ্ছে। আমাদের কিছু হবে না। নাগরিকত্ব বিল আমাদের নতুন করে অশান্তি এনেছে জীবনে। এই আইন মেনে নিতে পারবো না। কারণ আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই।’’
সাবিনা খাতুনের আবার দুবার বিয়ে হলেও দু’বারই তিন তালাক দিয়েছেন তাঁর স্বামী। বলেন, ‘‘একবার তিন তালাকের পর ভেবেছিলাম দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে হয়তো একটু সংসার করতে পারব। তাও হলো না। এখন বাপের বাড়িতেই লড়াই করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোনোক্রমে বেঁচে আছি। তিন তালাক বন্ধ হলেও তা কেবলই আইনে যাতে না থাকে সেটা দেখার অনুরোধ করেন সাবিনা। আমাদের মত আর কোনও মেয়ের সর্বনাশ না হয় সেটা নিশ্চিত করুন সরকার। তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কথা ভেবে সরকার এই আইন বন্ধ করুক। স্বামীর বাড়ি থেকে ঘরছাড়া হয়ে আছি। এরপর আর কোথায় জায়গা হবে। না হলে আমরাও তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব।’’
এই সমস্ত অসহায় মহিলাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে রকেয়া উন্নয়ন সমিতি। এই সমিতির সম্পাদিকা খাদিজা বানু বলেন, ‘‘তিন তালাক বন্ধ আইন পাস হলেও তা কেবলমাত্র একটি ফৌজদারি তকমা ছাড়া আর কিছুই নয়। সংখ্যালঘু মহিলাদের সন্তুষ্ট করার জন্য এই বিল পাস। কারণ এই বিলে খরপোশ দেওয়ার ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট কথা বলা নেই। নাগরিকত্ব আইন পাস হয় তালাকপ্রাপ্ত মহিলারা খুবই সংশয় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের কাছে কোন নির্দিষ্ট তথ্যই নেই। আমরা এই আইনের বিরোধিতা করছি । ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।এই অসহায় মহিলাদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন আইনজীবী নার্গিস তানজিমা। বলেন, মুর্শিদাবাদের তালাক প্রাপ্ত মহিলা প্রচুর। গুরুত্ব আইন পাশ হওয়ার এই সমস্ত মহিলারা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। কারণ অনেকের কাছেই আধার কার্ড, ভোটার কার্ড নেই। এই মহিলাদের জন্য অবশ্য আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’