#বর্ধমান: আজও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন জঙ্গল মহল। তারই প্রমাণ মিলল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের জঙ্গল মহলে। ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে ঘরছাড়া করার চেষ্টা করছিল গ্রামবাসীরা। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের দিকনগরের কেওতলা আদিবাসী পাড়ায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তুঙ্গে। পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে নির্যাতিত মহিলাকে উদ্ধার করতে যায়। কিন্তু তাতে ফল হয় উল্টো।
advertisement
পুলিশ যেতেই এলাকায় উত্তেজনা বেড়ে যায়। পুলিশের গাড়ি ঢুকতে দেখেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে গ্রামবাসীরা। পুলিশের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। পুলিশ কর্মী অফিসাররা বোঝানোর চেষ্টা করে। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তো আসেইনি, উল্টে পুলিশকে লক্ষ করে ইট ও গুলতি ছোড়া হয়। তাতে কয়েকজন পুলিশ কর্মী অল্প বিস্তর আহতও হন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শূন্যে দু রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। তাতে ছত্রভঙ্গ হন গ্রামবাসীরা। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামেরই এক গৃহবধূর ভর হয়েছিল। সেই ভর চলাকালীন তিনি ওই গ্রামেরই এক গৃহবধূকে ডাইনি বলে নিদান দেয়। তাঁকে গ্রাম ছাড়া করা না হলে এলাকার অমঙ্গল হবে বলেও ভর চলাকালীন জানান তিনি। এরপরই গ্রামবাসীরা ডাইনি অপবাদ দিয়ে সেই গৃহবধূকে গ্রামছাড়া করতে এককাট্টা হয়ে ওঠে। গৃহবধূর বাপের বাড়িতে ফোন করা হয়। তাঁদের মেয়েকে নিয়ে যেতে বলে চাপ দেওয়া হয়।
দীর্ঘক্ষন ধরে বাপের বাড়ি থেকে নিতে না আসায় উত্তেজনা বাড়ে। এরপর পুলিশ ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পরে পুলিশ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে। গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে ওই মহিলাকে ফের গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
আউশগ্রামের জঙ্গলের মাঝের গ্রামগুলি যে এখনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন তা এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, বলছেন বিশিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, ঠাকুরের ভর আজ বিজ্ঞানের যুগে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। হতেই পারে ভর হওয়া মহিলার কোনও শারীরিক বা মানসিক সমস্যা রয়েছে। তা থেকেই তিনি এ সব কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। ডাইনি বলে কিছু হয় না, তা একটি কুসংস্কার মাত্র, তা এলাকার বাসিন্দাদের বোঝানো প্রয়োজন। তা না হলে ফের অন্য কোনও এলাকায় এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
আউশগ্রাম-১ এর বিডিও চিত্তজিত বসু জানিয়েছেন, এলাকায় সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য আদিবাসী মোড়লদের সঙ্গে বসা হবে। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে।