নামে একশো আট শিব মন্দির। আছে একশো ন'টি। জপমালার মতো আছে একশো আটটি মন্দির। বাকি একটি একটু দূরে, গলার হারে লকেটের মতো। বর্ধমানের একশো আট মন্দিরের খ্যাতি এখন ভারত জোড়া। সারা বছর দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। বর্ধমানের নবাবহাটে প্রায় দুশো তিরিশ বছর আগে বহু অর্থ ব্যয় করে এই মন্দির গড়েছিলেন মহারানি বিষণকুমারী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধু সন্ন্যাসীদের এনে জাঁকজমক করে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
advertisement
মহারানি বিষণকুমারীর বর্ধমানের নবাবহাটে ১০৮ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠার এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এই মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। শেষ হয়েছিল ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় বর্ধমান সংলগ্ন নবাবহাট এলাকায় মহামারি দেখা দিয়েছিল। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। স্বজনদের হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিলেন এই এলাকার বাসিন্দারা। এলাকায় মন্দির গড়ে বাসিন্দাদের ঈশ্বরমুখী করে তাঁদের শোক ভোলাতে চেয়েছিলেন বর্ধমানের মহারানিমা। সেই ভাবনা থেকেই নবাবহাটে এই একশো আট শিব মন্দির গড়েন তিনি। মহাআড়ম্বরে সেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়।জপমালার আদলে ১০৮টি এবং অতিরিক্ত আর একটি, মোট ১০৯টি স্থাপত্যকে গেঁথে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই মন্দির। এই মন্দিরমালা বর্ধমানের এক অনন্য শিল্পকীর্তি। এই ১০৯তম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে লক্ষ সাধুর উপস্থিতি ঘটেছিল। তাঁদের পদধূলি রাজপরিবার একটি সোনার কলসিতে সংরক্ষণ করে রেখেছিল।
মন্দিরগুলির গঠন একই রকমের। ওড়িশার বালেশ্বরের মন্দিরের আটচালার নকশার আদলে নির্মিত সেগুলি। মন্দিরগুলির অবস্থান যেমন পাশাপাশি, তেমনি প্রতিটি মন্দিরের সামনেই আছে খোলা টানা বারান্দা। প্রতিটি মন্দিরই একটি দরজার। সব মন্দিরেই রয়েছে কষ্টিপাথরের গৌরীপট্ট-সহ শিবলিঙ্গ। প্রতিষ্ঠার সময়ে সবগুলি মন্দিরের সামনেই একটি করে বেল গাছ রোপন করা হয়েছিল।
Saradindu Ghosh