শিবানী সিং -এর ‘সহজ’ স্বীকারোক্তি, ‘বিক্রি করিনি স্যার! মানুষ করতে পারব না বলে, মানুষ করার জন্য, লেখাপড়া করানোর জন্য পাতানো দাদার হাতে তুলে দিয়েছিলাম!”
ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শহর মেদিনীপুরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ফুলপাহাড়ি এলাকায়। যদিও পেশায় রাজমিস্ত্রি অমরনাথ ও গৃহ পরিচারিকা শিবানী-র বাড়ি শালবনীর তাঁতিগেড়িয়ায়। ফুলপাহাড়িতে ছোট একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। এর আগে, ৬টি মেয়ে ও ১টি ছেলের জন্ম দিয়েছেন বছর ৩৫-৪০’র এই দম্পতি! তারা অবশ্য ওই দম্পতির সঙ্গেই থাকে। তবে, নিজেদের সদ্যজাত ‘অষ্টম’ কন্যা সন্তানকে যে অভাবের তাড়নায় অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তা স্বীকার করেছেন শিবানী।
advertisement
গত ১৭ জানুয়ারি অষ্টম সন্তানের জন্ম দেন ওই দম্পতি। আর তার কয়েকদিন পরই সদ্যোজাত ওই কন্যা সন্তান-কে শালবনীর গোদামৌলি-র এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছিলেন অমরনাথ ও শিবানী। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, টাকার জন্য বিক্রি করে দিয়েছিল ওরা। স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মৌসুমী দত্ত রবিবার দুপুরে বলেন, “ওই মহিলা এই এলাকার (ফুলপাহাড়ির) নন। তবে, ওর যখন সন্তান হয়েছিল তখনও দেখেছি।”
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জেলার চাইল্ড লাইন বা শিশু সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা শালবনী থানার সহায়তায় সদ্যজাত শিশু কন্যাকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে তথা সরকারি হোমে পাঠিয়েছেন।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “বাচ্চা এইভাবে কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় না। এর একটা আইনগত পদ্ধতি রয়েছে। এটা অপরাধ। যদি কেউ করে থাকেন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরের সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন, দরিদ্র এই দম্পতির কী ভাবে একটার পর একটা সন্তান হওয়ার আগেই তাঁদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? কিন্তু, স্থানীয় প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা এতদিন কী করছিলেন?” উত্তর নেই কারুর কাছেই।
শোভন দাস: পশ্চিম মেদিনীপুর