তিন বছর আগে ২০২২ সালে দেড় বছরের শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পলাশ ও তাঁর পরিবার বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছিলেন। দিন মাইনের কাজে যোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু একদিন রাতে হঠাৎই পুলিশ এসে বাংলাদেশি সন্দেহে পলাশ অধিকারী, তাঁর মা, বাবা, স্ত্রী সহ দেড় বছরের শিশু পুত্রকে থানায় নিয়ে যায়। মা-বাবার থানা থেকে মুক্তি মিললেও ছাড় মেলেনি পলাশ ও তাঁর স্ত্রী-র। বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দেড় বছরের শিশু পুত্রকে নিয়ে সংশোধনাগারে থাকতে হয়েছিল তাঁদের।
advertisement
তথ্য যাচাই করতে জামালপুরের বাড়িতে এসেছিল বেঙ্গালুরুর পুলিশ। জমির দলিল, পরচা, জামালপুর থানা, বিডিও, মহকুমা শাসকের কাছ থেকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শংসাপত্র আদালতে জমা দিয়েছিলেন। জমা দেওয়া নথি ও আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ডের সঙ্গে ওই সব নথি ঠিক কি না, বেঙ্গালুরুর ভাথ্রুর থানা থেকে পুলিশ এসে খতিয়ে দেখে গিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ধৃত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের তেলে পুকুর গ্রামের পলাশ অধিকারী, তাঁর স্ত্রী শুক্লা অধিকারী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা দেড় বছরের শিশুসন্তানের জামিন প্রায় দশ মাস পরে মিলেছিল।
অথচ তাঁদের সঙ্গেই পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল পলাশের বাবা পঙ্কজ ও মা সবিতা অধিকারীকে। তাঁরা কিন্তু পুলিশের চোখে ‘বাংলাদেশি’ না হওয়ায় থানা থেকেই ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় তিন বছর আগের ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি পলাশদের। এখনও তাঁদের নামের পাশ থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহ ঘোঁচেনি। সে জন্যে নিয়মিতভাবে বেঙ্গালুরুর মেট্রোপলিটন আদালতের শুনানিতে হাজিরা দিতে হয়। তাই জামিন পেয়েও স্বস্তিতে নেই পলাশ ও তাঁর পরিবার। ঘটনার তিন বছর পরও আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। জামিন মেলার পর বেশ কিছুদিন বেঙ্গালুরুতে থাকলেও ঠিকমতো কাজ না পেয়ে পলাশ জামালপুরে চলে আসে। তবে তাঁর স্ত্রী এখনও বেঙ্গালুরুতে কাজ করছেন।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের তেলে পুকুর গ্রামে অ্যাসবেস্টসের চালার দু-কুঠুরি বাড়ি পলাশদের। আগে ছিটেবেড়া ও দরমার বাড়িতে তাঁরা থাকতেন। ১০ বছর আগে সরকারি অনুদানে ওই বাড়িটি তৈরি করেছেন। সেই ঘরে বসে, পলাশের মা সবিতা অধিকারীর কথায়, তিন বছর আগেকার ভয় এখনও আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এখনও আতঙ্কে আছি। কবে এই সংকট থেকে মুক্তি পাব জানি না। তবে ওই গ্রামের জৌগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য কৃষ্ণা সরকার বলেন, বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে পরিবারটি এনআরসি আতঙ্কে আছেন। আমরা পরিবারটির পাশে আছি।