খেজুরি প্রাচীনকালের উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম সমুদ্র বন্দর। খেজুরির ইতিহাস কয়েকশো বছরের পুরনো। খেজুরিতে ডাচ ওলন্দাজ ও পর্তুগীজ বণিকেরা বহু সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিল। খেজুরি সংলগ্ন হিজলিতে ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিকদের জাহাজ এস পৌঁছায়। ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন জেমস মেরিনার নেতৃত্বে রেবেকা নামক একটি পালতোলা জাহাজ খেজুরি বন্দরে আসে তৎকালীন খেজুরির নাম ছিল কেডিগিরি। সেই থেকে শুরু হয় খেজুরি বন্দর। এরও প্রায় একশ বছর পর ইংরেজরা ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে খেজুরি বন্দর গড়ে তোলে। মূলত লবণ, নীল ও দাসপ্রথার জন্য মানুষ কেনা বেচার ক্ষেত্র হিসেবে দ্রুতই খেজুরি বন্দরের নাম ছড়িয়ে পড়ে। গুগল লোকেশন : https://maps.app.goo.gl/G9B5weQ1MmHNvKAV7
advertisement
খেজুরিতে ডাকঘর আরও কয়েক বছর পরে চালু হয়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিকদের ইন্ডিয়া কোম্পানির খবর আদান প্রদানের জন্য খেজুরিতে প্রথম ডাকঘর স্থাপন হয়। যা ভারতের প্রথম ডাকঘর। খেজুরির বাসিন্দা ও ইতিহাস গবেষক অরবিন্দ বেরা জানান, এশিয়াটিক সোসাইটি ও ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে প্রচুর বইপত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় এই ডাকঘরের। খেজুরি বন্দরের পাশেই গড়ে উঠেছিল চারতলা ডাকঘর। ১৮৩০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজা রামমোহন রায় এই ডাকঘরে রাত্রি যাপন করেছিলেন। ভারতপথিক রাজা রামমোহন রায় তাঁর বিলেত যাত্রাকালে কলকাতা থেকে ফোবর্স স্টিমারে সকালে যাত্রা করে সন্ধ্যায় খেজুরিবন্দর অফিসে পৌঁছান ১৯ নভেম্বর, ১৮৩০। রাত্রে খেজুরিবন্দর অফিস তথা খেজুরির প্রাচীন ডাক ও তার ভবনের অতিথিনিবাসে রাত্রি যাপন করেন। যাত্রা করে বিলেতের লিভারপুল বন্দরে পৌঁছান। শুধু তাই নয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪২ ও ১৮৪৫ সালে খেজুরি বন্দর দিয়েই বিদেশ যাত্রা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: মাসে ভাতা ৩০ হাজার টাকা, বড় সুযোগ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে! এখনই আবেদন করুন
খেজুরিতে এলে আপনি হুগলি নদীর মোহনা দেখতে পাবেন। বিস্তৃত বালিয়াড়ি মন ভোলাবে। এর পাশাপাশি এখানে রয়েছে হিজলী শরীফ, প্রাচীন ডাকঘরের ধ্বংসাবশেষ। প্রাচীন লাইট হাউস। অনতিদূরে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। এমনকি আজও বর্তমান কপালকুণ্ডলা মন্দির। এছাড়া আশেপাশে রয়েছে অনেকগুলি সমুদ্র সৈকত।শীতের সময় এই পর্যটন কেন্দ্রে এলে আপনি পরিযায়ী পাখিদেরও দেখতে পাবেন। রয়েছে ভারতের বৃহত্তম মৎস্য বন্দর দেশপ্রাণ মৎস্যবন্দর।
আরও পড়ুন: তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে টাকার পাহাড়?সিবিআই-এর হাতে এল একটি ব্যাগ! চক্ষু চড়কগাছ
কীভাবে আসবেন! কলকাতা থেকে খেজুরির দূরত্ব মাত্র ১৩০ কিলোমিটার। সহজেই কলকাতা বা হাওড়া থেকে সরাসরি বাসে করে আসা যায়। এছাড়া দিঘা হাওড়া রেল লাইনে লোকাল ট্রেনে হেঁড়িয়া স্টেশনে নেমে বাস ধরে খেজুরি আসা যায়। রাত্রি বাসের জন্য একাধিক বেসরকারি লজ ও হোটেল রয়েছে। বর্তমানে খেজুরিতে একটি সংগঠনের উদ্যোগে হেরিটেজ খেজুরিকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার চেষ্টা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে সব মিলিয়ে শীত মরশুমে প্রিয়জন অথবা পরিজনের সঙ্গে একান্ত সময় কাটাতে হলে চলে আসুন খেজুরি।
—– সৈকত শী