এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয় বলেই দাবি প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করা চিকিৎসকদের। তাঁরা জানান, গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে ১৮ বছরের কম বয়সিরা প্রায় প্রতিদিনই সন্তানের জন্ম দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে কুলতলির ওই নাবালিকার মত আরও কম বয়সি মেয়েও মা হচ্ছে। এত কম বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভপাতও হচ্ছে। রক্তে হিমোগ্লেবিনের মাত্রা কমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। নাবালিকা বিয়ে আটকাতে রাজ্য জুড়ে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ হচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলছে প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসায় আসা প্রসূতি তালিকাতেই।
advertisement
সূত্রের খবর, কুলতলির ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে গত আর্থিক বছরে ৮৫৪ জন কুড়ি বছরের কম বয়সি (টিন এজার) কিশোরী মা হয়েছে। যা হাসপাতালে আসা মোট অন্তঃসত্ত্বার ১৮ শতাংশ। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০ বছরের নীচে অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা কুড়ি শতাংশের আশেপাশে। এদের অনেকেরই বয়স ১৮ বছরের কম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত ব্লকগুলিতে সর্বত্রই পরিস্থিতি প্রায় একই বলেই দাবি চিকিৎসকদের। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যানই চমকে দেওয়ার মত। এর বাইরে একটা অংশ স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা করাচ্ছে। সেই হিসেব সবসময় সামনে আসছে না। চিকিৎসকেরা বলছেন, এর পিছনে দায়ী অসচেতনতাই।
আরও পড়ুন : গভীর রাতে হানা দেবে দাঁতাল! প্রাণ বাঁচাতে সূর্য ডুবলেই ঘর ছেড়ে স্কুলবাড়িতে আশ্রয় অসহায়দের
নানা কর্মসূচি, আইনি পদক্ষেপেও নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আটকানো যাচ্ছে না। ইদানীং নাবালক-নাবালিকাদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যৌন সংসর্গের ঘটনা বেড়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৫-১৬ বছরের মেয়েরা বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে। ফলে তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের। কুলতলিতেই এমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে সম্প্রতি। এলাকারই এক স্কুলের একাদশ শ্রেণির কৃতী ছাত্রী শারীরিক কিছু সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসে। পরীক্ষা করে জানা যায়, সে অন্তঃসত্ত্বা। এলাকার এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে জানায় সে। দ্রুত বছর ষোলোর ওই ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন হয়। স্কুলে প্রথম হওয়া ওই ছাত্রী বর্তমানে সন্তান প্রসবের অপেক্ষায়। শারীরিক জটিলতা এড়াতে কুড়ি বছর বয়সের আগে মেয়েদের মা হওয়া উচিত নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। প্রশাসনের তরফে গ্রামে গ্রামে এই বার্তা প্রচারও করা হচ্ছে। কমবয়সী দম্পতিদের নিয়ে বৈঠক, কাউন্সেলিং হচ্ছে। গর্ভনিরোধক নানা উপায় সম্পর্কে জানানো হচ্ছে তাদের। কিন্তু ফল মিলছে কম ক্ষেত্রেই।
জেলার এক গ্রামীণ হাসপাতালে কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসাকর্মীর কথায়, “কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তো আছেই। বিয়ের পর দ্রুত বাচ্চা নিয়ে নিতে হবে, এমন প্রবণতাও কাজ করে। বাড়ির মা-কাকিমারাই চাপ দেন। ইদানীং অনেক কমবয়সি ছেলে, এমনকী নাবালকদেরও বিয়ে হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন শারীরিক জটিলতার কথা বা গর্ভনিরোধকের গুরুত্ব এই বয়সের ছেলেমেয়েরা বুঝতে চায় না।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার এক আধিরকারিক বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় অনেক নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে। এটা তো চিন্তার বটেই। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এটা শুধু মাত্র স্বাস্থ্য দফতরের হাতে নেই। এটা সামাজিক সমস্যা। বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ে এর সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।” ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, নাবালিকা বিয়ের আয়োজনের খবর আসলেই পদক্ষেপ করা হয়। সচেতনতার প্রচারেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।