বাড়ির ভিত খুঁড়তে গিয়ে হদিশ মেলে সুড়ঙ্গের। এই ঘটনাকে ঘিরে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের মাহাতা গ্রামে আলোড়ন পরে যায়। সুড়ঙ্গে গুপ্তধন রয়েছে বলে গুজব রটে যায়। শয়ে শয়ে উৎসাহী দূর দূরান্ত থেকে সুড়ঙ্গ দেখতে ভিড় করেন। মেলা বসে যায় এলাকায়। উৎসাহীদের ঠেকাতে ব্যারিকেড দেয় প্রশাসন। বসানো হয় পুলিশ পিকেট।
এদিন জিয়ারুল মল্লিকের ওই জমিতে আসেন রাজ্য সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকরা। সিনিয়র আর্কিওলজিস্ট প্রকাশ চন্দ্র মাইতির নেতৃত্বে এদিন পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। সুড়ঙ্গের মুখে গিয়ে ছবি তোলেন তাঁরা। এরপর শুরু হয় খনন কাজ। মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রস্হ উচ্চতা জরিপ করেন তাঁরা। বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেন। মাটি খুঁড়তে গিয়ে পোড়া খোলামকুচি, কাঠ কয়লা পাওয়া যায়। সেসব জিনিস ও মাটি নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেন তাঁরা। এই খননকার্য দেখতে হাজার হাজার উৎসাহী পুরুষ মহিলা ভিড় করেন। গুপ্তধন মিলল কিনা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা।
advertisement
তবে ওই সুড়ঙ্গের আশপাশে এদিন খনন করা হয়নি। সেসব জায়গাতেও নির্মান ছিল বলে প্রমান মিলেছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানান, সুড়ঙ্গের ভেতর একটি আর্চ রয়েছে। চোদ্দশো শতক থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত এই ধরনের নির্মাণ শৈলীর প্রাধান্য ছিল। ইটের আকার দেখে মনে করা হচ্ছে এই নির্মান তিনশো থেকে চারশো বছরের পুরনো। সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই এলাকায় আর খনন হবে কিনা তা সেই পরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মাহাতা গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাটির তলায় প্রচুর নির্মাণ রয়েছে এই এলাকায়। মাটি খুঁড়লেই পুরনো ইট বেরিয়ে আসে। কুনুর নদীর তীরে গড়ে ওঠা জনপদ বারে বারে বন্যায় বিলীন হয়ে যায়। সেইসব জনপদেরই ধ্বংসাবশেষ বলেই মনে করছেন অনেকেই। ইতিহাসবিদরা বলছেন, যে কোনও খননকার্যেরই গুরুত্ব অপরিসীম। জনপদ কতদূর বিস্তৃত ছিল, কী ধরনের জীবন যাপন করতেন সেই সময়ের বাসিন্দারা তার অনেকটাই জানা যায় এই ধরনের খনন কাজে।
শরদিন্দু ঘোষ