পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কোলসরা গ্রামের ঘোষাল পরিবার। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ দিগম্বর ঘোষাল ছিলেন সম্রাট শের শাহের বিশ্বস্ত কর্মচারী। জি টি রোড সংস্কারের সময় ও বাংলার রাজস্ব আদায়ের জন্য দিগম্বর ঘোষালকে বাংলায় পাঠান সম্রাট শের শাহ। সেই সূত্রেই কংসা নদী ধরে জামালপুরে কোলসরা গ্রামে আসেন তিনি এবং সেখানেই রাত্রিবাস করেন। ওই রাতেই দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী স্বপ্নাদেশ দেন দিগম্বর ঘোষালকে কোলসার গ্রামে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। দেবীর সেই নির্দেশের কথা শুনে তাম্রপত্রের দানপত্র করে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি দান করেন সম্রাট শের শাহ।
advertisement
সেই জমিতেই মন্দির গড়ে দেবীর পুজো সূচনা করেন দিগম্বর ঘোষাল। সেই থেকে এই গ্রামে বসবাস শুরু ঘোষাল পরিবারের। দেবীর ভোগেও রয়েছে বিশেষত্ব। পরিবারের সদস্য পিয়ালি ঘোষাল জানান,গঙ্গাজল দিয়েই রান্না করা হয় দেবীর ভোগ।কলাবাগানে প্রথম দেবীর দর্শন পেয়েছিলেন বলে ভোগে দেওয়া হয় কলা, থোর ও মোচার বিভিন্ন পদ।এমনকি পুজোর ভোগও রান্না করা হয় গঙ্গাজলে। পুজোর আগে বড় বড় পাত্র করে গঙ্গা থেকে জল নিয়ে আসা হয় এবং সেই জলেই প্রতিদিন পুজোর ভোগ রান্না করা হয়। আজও সেই প্রথা মেনে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয় ঘোষাল পরিবারে।এই পরিবারের প্রতিমা সাবেকি ধাঁচের। জন্মাষ্টমীতে দেবীর কাঠামোই মাটি দান করার রীতি রয়েছে। অন্যান্য জায়গায় নবমীর দিন কুমারী পুজো হলেও ঘোষাল পরিবারে কুমারী পুজো হয় দশমীতে।
পরিবারের সদস্যা মহুয়া ঘোষাল জানান, আগে বলি প্রথা চালু থাকলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময় বিভিন্ন কাজে পরিবারের অনেক সদস্য বাইরে থাকলেও পুজো উপলক্ষে সকলেই আসেন কোলসরা গ্রামে এবং একত্রে মেতে ওঠেন দুর্গাপূজার আনন্দে।পারিবারিক পুজো হলেও গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণে এই পুজো হয়ে উঠেছে সার্বজনীন। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই পুজোয় একদিকে যেমন রয়েছে সম্রাট শের শাহের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তেমনই অন্যদিকে মিশে আছে পারিবারিক বিশ্বাস আর পরম্পরা। কালের প্রবাহে জৌলুস কমলেও,এই পুজোর রীতিনীতি আর গ্রামবাসীর অংশগ্রহণ আজও অটুট।