মূঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে মুর্শিদাবাদে জমিদারি পান অনাদিরাম। বর্গি হামলায় ক্লান্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে বর্ধমানের মেমারির আমাদপুর গ্রামে চলে আসেন তাঁর বংশধর চন্দ্রশেখর চৌধুরী। আমাদপুরের জমিদার হয়েও সুন্দরবনের মসজিদবাড়ি এলাকারও জমিদারি পান তিনি। সেই থেকেই জমিদারবাড়ির পুজো চৌধুরী বাড়ির পুজো বলেই পরিচিত।
বর্ধমানের মেমারি ছাড়িয়ে তিন কিলোমিটার গেলে আমাদপুর । চারদিকে সবুজ মাঠ। পুকুর। গাছ-গাছালির মাঝে চৌধুরীদের জমিদারবাড়ি। মুর্শিদাবাদ থেকে আসার সময়ে কুলদেবতা রাধামাধবকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন চন্দ্রশেখর। জমিদারবাড়ি তৈরির পাশাপাশি মন্দির তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করেন রাধামাধবকে। একই সঙ্গে শুর হয় দুর্গাপুজোও। তখন পুজো হত রাধামাধবের মন্দির লাগোয়া ঘরে। পরে পুজো শুরু হয় দুর্গাদালানে ।
advertisement
পুজো শুরু হয় বোধনের সাতদিন আগে। পনের দিন ধরে চলে পুজো । নিয়মিত চণ্ডীপাঠ। ষষ্ঠীর দিন সকালে চৌধুরী পরিবারের মেয়েরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কনকাঞ্জলী হিসেবে একমুঠো করে চাল ও ডাল সংগ্রহ করেন। সেই চাল ও ডাল বেটে আলপনা দেওয়া হয় দুর্গাদালানে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেবীর বোধন। সপ্তমীতে কলাবউ স্নান। আজও কালিকাপুরাণ পুঁথি মেনে পুজো হয় চৌধুরী বাড়িতে। এখানে লক্ষ্মী , সরস্বতীর বাহন নেই । চাঁদমালাও থাকে না কারোর।
পুজো উপলক্ষে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয়রা ফিরে আসেন গ্রামে । নহবতের সুরে জমজমাট হয়ে ওঠে বছরভর ঝিমিয়ে থাকা দুর্গাদালান। অষ্টমী, নবমীতে জমিয়ে নাটক। নাচগান। আবৃত্তি। ভোগ খাওয়া। সারা বছরের জমিয়ে রাখা আড্ডা। সামনে বছরের পুজোর প্ল্যান। এখন দিন গুনছে আমাদপুরের জমিদারবাড়ি।