রথযাত্রার সময় শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে এক মাস ধরে মেলা চলে। শ্রীরামপুরের মাহেশ জগন্নাথ দেবের মূল মন্দির থেকে মাহেশেরই গুন্ডিচা মন্দির (মাসীরবাড়ী) অবধি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিশাল রথটি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টোরথের দিন আবার রথটিকে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়।
মাহেশের জগন্নাথ মন্দির ও রথযাত্রা উৎসবের পিছনে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। চতুর্দশ শতকে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বাঙালি সাধু পুরীতে তীর্থ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল, তিনি জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে ভোগ রেঁধে খাওয়াবেন। কিন্তু পুরীর মন্দিরের পাণ্ডারা বাধ সাধায় তিনি তাঁর সাধ অপূর্ণ থেকে গেল। একরাশ দুঃখ বুকে নিয়ে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী আমরণ অনশনে বসলেন। তিন দিন পর স্বয়ং জগন্নাথদেব তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিলেন।
advertisement
বললেন, "ধ্রুবানন্দ, বঙ্গদেশে ফিরে যাও। সেখানে ভাগীরথী নদীর তীরে মাহেশ নামেতে এক গ্রাম আছে। সেখানে যাও। আমি সেখানে একটি বিরাট দারুব্রহ্ম (নিম গাছের কাণ্ড) পাঠিয়ে দেব। সেই কাঠে বলরাম, সুভদ্রা আর আমার মূর্তি গড়ে পূজা কর। আমি তোমার হাতে ভোগ খাওয়ার জন্য উদগ্রীব।"
এই স্বপ্ন দেখে ধ্রুবানন্দ মাহেশে এসে সাধনা শুরু করলেন। তারপর এক বর্ষার দিনে মাহেশ ঘাটে একটি নিমকাঠ ভেসে এল। তিনি জল থেকে সেই কাঠ তুলে তিন দেবতার মূর্তি বানিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন।
পরবর্তীকালে ১৭৫৫-এ কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক মাহেশে জগন্নাথ দেবের মন্দির তৈরি করেছিলেন যা আজও রয়েছে। বর্তমান রথটি প্রায় ১২৯ বছরের পুরনো। সে যুগে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে শ্যামবাজারের বসু পরিবারের সদস্য হুগলির দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসু রথটি তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন। ৫০ ফুট উচ্চতার, ১২৫ টন ওজনের লোহার রথটি তৈরি করেছিল মার্টিন বার্ন কোম্পানি। রয়েছে 9 টি চূড়া, ১২ টি লোহার চাকা এবং দু'টি তামার ঘোড়া।
প্রতি বছর রথের আগে বিগ্রহের অঙ্গরাগ হয়ে থাকে। রথের দিন জিটি রোড দিয়েই রথ টানা হয়। এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে আজও বসে মেলা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর 'রাধারানি' উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল এই মাহেশের রথযাত্রা।