প্রায় সাড়ে পাঁচশোরও বেশি রেকর্ড সংগৃহীত আছে আজও। পরিবার প্রধান রমেশ চন্দ্র দেব গত হলেও , তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং নিজের কেনা দুটি পরবর্তীর অর্থাৎ বর্তমান প্রজন্মের অরিন্দম দেবের সংগৃহীত মোট পাঁচটি গ্রামাফোন আজও সচল রয়েছে দেব পরিবারে। এ বিষয়ে অরিন্দম দেব বলেন, বর্তমানে সারানোর মিস্ত্রির সংখ্যা কমে গেলেও, ‘ছোটবেলা থেকে কলকাতা বিভিন্ন দোকানে যাওয়া অভ্যাস ছিল, দূরের পথ বলে সামনে বসেই সারিয়ে নিয়ে আসতাম সেই থেকে অনেকটাই রপ্ত হয়েছে, আর এই কারণেই আজও অক্ষত রাখতে পেরেছি পাঁচটিই।’ পেশায় রেলকর্মী হলেও সমাজ সেবী অরিন্দম দেবের নেশা সৃজনশীল বিভিন্ন সৃষ্টি। তবে আগামীতে একটি গানের সংগ্রহশালা করার ইচ্ছা।
advertisement
রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের পুরনো টপ্পা গান থেকে শুরু করে আধুনিক সিনেমার প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়দের গান, সব রেকর্ড তাঁর সংগ্রহে আছে। আধুনিক ডিজিটাল মিউজিক প্লে’র যুগে এ যেন ইতিহাসকে আঁকড়ে বাঁচা। অরিন্দমবাবুর কাছে আছে প্রায় ৫০ বছরের পুরনো একটি গ্রামাফোন। সেটি এখনও সমানভাবে সচল। অবসর সময়ে ওই গ্রামোফোনে নিজের সংগ্রহের দুষ্প্রাপ্য রেকর্ডগুলো বাজিয়ে শুনতে থাকেন। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনীর একেবারে আসল রেকর্ড আছে তাঁর সংগ্রহে। হারিয়ে যাওয়া অতীতের বিখ্যাত সব যাত্রাপালার রেকর্ডও আছে।
প্রত্যেক বছরের মতো অন্যথা হয়নি এই বছরও। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্ক প্রবীণ নাগরিকেরা সকলেই ভোরবেলা চলে এসেছেন অরিন্দম বাবুর বাড়িতে গ্রামাফোনে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য। তারা জানান টিভিতে কিংবা মোবাইলে মহালয়া শোনা গেলেও পুরনো আভিজাত্যকে বজায় রেখে গ্রামাফোনে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার মজাটাই অন্যরকম। সবচেয়ে বড় কথা শোনার ক্ষেত্রে চোখ বিরাম পায় তাই মনসংযোগ আরও বেশি হয়ে ওঠে।
তাঁর এই অন্যরকম শখ প্রসঙ্গে অরিন্দম দেব বলেন, এই রেকর্ডগুলো খুব যত্নে রাখতে হয়। প্রাচীন গ্রামাফোন ও মিউজিক রেকর্ড সচল রাখার জন্য যে পদ্ধতিতে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় তা বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। তবে এই শখ’ই তাঁর জীবনের মূলধন। এই বাংলায় খুব কম মানুষের কাছে বর্তমানে এমন সব দুষ্প্রাপ্য রেকর্ড আছে বলে দাবি করেন অরিন্দমবাবু। দুষ্প্রাপ্য রেকর্ডের সন্ধানে তিনি নানান সময়ে লখনউ, হায়দ্রাবাদ পর্যন্ত ছুটে গিয়েছেন। সেখান থেকে বিখ্যাত সব ঠুমরির রেকর্ড সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। অন্যদিকে বৃদ্ধরা যেমন পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন আজকের দিনে তেমনই নতুন এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অভিনবত্বের ছোঁয়া পায় প্রাচীন হারিয়ে যাওয়া কলের গান চলা স্বচক্ষে দেখতে এবং নিজে কানে শুনতে পেয়ে।