প্রায় ২৫০ বছর আগে ইংরেজ শাসনামলে শুরু হয় এই পুজো। কথিত আছে, অখণ্ড মেদিনীপুরের পিংলা থানার গোবর্ধনপুর গ্রামের নবকুমার বসু ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে সবং, পিংলা ও পাঁশকুড়া থানার প্রায় ৫০টি মৌজার জমিদারি পান।
পরে তিনি পাঁশকুড়ার জমিদার চন্দ্রশেখর বাড়ির কন্যাকে বিবাহসূত্রে হলুদ তেলে ১৬টি মৌজার ১৬ আনা তালুক দানে পান। জমিদারি দেখভালের স্বার্থে নবকুমার বসু এগরার আকলাবাদে এসে অস্থায়ী ছাউনির বাসগৃহ তৈরি করেন এবং এখানেই তিনি শুরু করেন দক্ষিণাকালীর পুজো, যা পরবর্তীতে ‘বাসাবাড়ির কালী পুজো’ নামে খ্যাত হয়। তৎকালীন সময়ে ইংরেজ সরকার নবকুমার বসুর নিষ্ঠা ও প্রজাদের প্রতি সদ্ব্যবহারের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘চৌধুরী’ উপাধি প্রদান করেন।
advertisement
আরও পড়ুন : গ্রামের মাটিতে ঢাকের বাদ্যি, প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে প্রাচীন কালীপুজো
এই পরিবার আজও সেই প্রাচীন রীতি মেনে পুজো করে আসছে। সময় পাল্টেছে, কিন্তু পুজোর নিয়ম, নিষ্ঠা ও ঐতিহ্য আজও অপরিবর্তিত। নিয়ম মেনে পুজোর আগে দেবীকে রুপোর মুকুট ও স্বর্ণালঙ্কারে সজ্জিত করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে মানত করলে মা মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।
এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল ‘নিষ্করি ভোগ’, যা বাড়ির ব্রাহ্মণরাই তৈরি করেন। ভোগ খেতে আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। আগে খড়ের ছাউনির ঘরে পুজো হত, এখন দুটি সুন্দর মন্দিরে মা’র পুজা হয়।
আগেকার দিনের প্রদীপ ও মশালের আলো আজ জায়গা ছেড়েছে জেনারেটরের লাইটে, তবে ভক্তির আলো একইভাবে জ্বলে রয়েছে। আজও বসু চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন যাতে পুজোয় কোনও ত্রুটি না থাকে। বৈদিক রীতি মেনে প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান নিষ্ঠাভরে সম্পন্ন হয়। যেখানে ঐতিহ্য, ভক্তি আর ইতিহাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।