রঙ খেলবে না বর্ধমান। চারদিক যখন রঙের উৎসবে মাতোয়ারা থাকবে তখন একেবারেই রঙ এড়িয়ে স্বাভাবিক থাকবে ইতিহাস প্রাচীন এই শহর। এবার নতুন করে এই নিয়ম নয়। রাজ আমল থেকে এই প্রথা চলে আসছে বর্ধমানে। পরদিন সবাই যেখন রঙ তুলতে ব্যস্ত তখন রঙের উৎসবে মেতে ওঠেন বর্ধমানের বাসিন্দারা।
রাজা নেই, নেই রাজ আমল। কিন্তু সে আমলের প্রথাই রীতিতে পরিণত হয়েছে এই শহরে। বর্ধমানের রাজা মহাতাব চাঁদ ১৮৫০ সাল নাগাদ এই প্রথার প্রচলন করেন। তিনি ঘোষণা করেন দোল পূর্ণিমার দিনটি শুধুমাত্র দেবতার দোল হিসেবেই পালিত হবে। দেবতার পায়ে আবির দিয়ে আর্শীবাদ নেবেন বাসিন্দারা। পরদিন দোল খেলবে সাধারন মানুষ। সে সময় বর্ধমানের সব বৈষ্ণব মন্দিরেই রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে দোল পূর্ণিমা পালন করা হতো। যেহেতু দোল পূর্ণিমার দিন দেবতার দোল তাই এদিন প্রজাদের দোল খেলা নিষিদ্ধ ছিল। পরদিন শহর আবিরে আবিরে রাঙা হয়ে উঠতো। পরদিন রাজা নিজেও রাজ কর্মচারীদের সঙ্গে দোল খেলায় মেতে উঠতেন। দেদার খানাপিনার ব্যবস্থা থাকতো রাজবাড়িতে।
advertisement
সেই ঐতিহ্য মেনেই আজও দোল পূর্ণিমায় দেবতার পায়ে আবির দেন রাজবাড়ির কুল পুরোহিত। লক্ষ্মী নারায়ন জিউ, রাধা মাধব জিউ মন্দিরে দেবতার পায়ে আবির দেওয়ার আগে বিশেষ পুজো হয়। সেই পুজো উপলক্ষে মন্দিরে ভিড় করেন শহরবাসী। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে শহর জুড়ে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বসন্তকে আহ্বান করা হয়। পথ নৃত্যের আয়োজন করে বিভিন্ন সংস্হা। ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল গানে মুখরিত হয় চারপাশ। কিন্তু রঙ খেলার কথা না ভাবাতেই অভ্যস্ত এ শহরের বাসিন্দারা। তাঁরা তখন পরের দিনের প্রস্তুতি নেন। পরদিন তো একে অপরকে রাঙিয়ে দেওয়া, সবার রঙে রঙ মেলানোর দিন।