আরও পড়ুন: পুরীতে সমুদ্রের ধারে প্রেমিকের সামনে কলেজ ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ! ভয়াবহ ঘটনা
মল্ল পরিবারের প্রাচীন ইতিহাস সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের আগে মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায়। ৯৯৭ সালে কোনও এক সময়ে ১৯তম মল্লরাজ জগৎমল্ল শিকার করতে বেরিয়ে জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন। কথিত আছে, পথের খোঁজ করতে গিয়ে ক্লান্ত জগৎ মল্ল একসময় বটগাছের তলায় বসে পড়েন। সেখানেই নানা অলৌকিক কাণ্ডকারখানার মুখোমুখি হতে হয় রাজা জগৎ মল্লকে।
advertisement
শেষে রাজা ওই বটগাছের নীচে দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপন করার দৈববাণী পান। নির্দেশ মত রাজা জগৎ মল্ল বটগাছের নীচেই দেবীর সুবিশাল মন্দির তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি, ঘন জঙ্গল কেটে জগৎমল্ল রাজধানী সরিয়ে আনেন বিষ্ণুপুরে। তারপর দীর্ঘ ১০২৯ বছর ধরে বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী রয়েছেন মল্লরাজদের কুল দেবী মৃন্ময়ী। পরবর্তীতে মল্ল রাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হলে শব্দকে ব্রহ্মজ্ঞান করে তোপধ্বনির প্রচলন শুরু হয়। সেই প্রথা আজও চলে আসছে। পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট আজও ঘোষিত হয় তোপধ্বনির মাধ্যমে। কিন্তু এখানে পুজোতে রয়েছে এক অন্য রীতি।
সারা রাজ্যে দুর্গাপুজো কালিকাপুরাণ মতে হলেও শুরুর দিন থেকে বিষ্ণুপুরের রাজপরিবার দেবী মৃন্ময়ীর পুজো করে একটি প্রাচীন বিশেষ পুঁথি অনুসারে। ‘বলিনারায়ণি’ নামে সেই পুঁথির নিয়ম নীতি মেনেই মল্লরাজ পরিবারের পুজো হয় এখনও। রাজার পুজো, তাই পুজোর নিয়ম কানুনও ভিন্ন ধরনের। এই পুজো শুরু হয়, জিতাষ্টমীর ঠিক পরের দিন অর্থাৎ নবমী তিথি ধরে। এই বছরও তার অন্যথা হল না। আজ নবমাদি কল্পারম্ভে সাত সকালে দেবীর আগমন ঘটে প্রাচীন মন্দিরে। প্রাচীন রীতি অনুসারে মঙ্গলবার রাজ দরবার সংলগ্ন গোপালসায়রে স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাকালীকে। আজও দেবীর আগমনে মল্লভূম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পুজোর গন্ধ, মেতে উঠেন সারা মল্লগড় বিষ্ণুপুর নিবাসী।
এক সময় যে তোপের শব্দ শুনে দূর দূরান্তের প্রজারা জানতে পারতেন দেবীর আগমন বার্তা, তার পরিসর ছোট হয়েছে। তবে বন্ধ হয়নি তোপধ্বনির সেই রেওয়াজ। মা মৃন্ময়ী মন্দিরের পাশে গোপালসায়রের পাড়ে কামান দাগা হয় আজও। আনন্দে মেতে ওঠে প্রাচীন মল্লভূমের আপামর মানুষ। রাজপরিবারের বর্তমান যারা উত্তরসূরী রয়েছেন তাদের সুতো ছিঁড়লেও পুজোর কয়টা দিন যেন তারা এক। নেই রাজত্ব, নেই রাজাও। তবুও নিষ্ঠা ভরে পালিত হয়ে আসছে শতাব্দী প্রাচীন মল্লরাজের পরিবারের পুজোর রীতিনীতি।