নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের এক কন্যার বিয়ে হয়েছিল বর্ধমান রাজার এক পুত্রর সঙ্গে। সময়ের ব্যবধানে মেয়েটি সন্তানসম্ভবা হয়। সব খাবারেই তার অনীহা।কিছুই তার মুখে রোচে না। তার শাশুড়ি রানিমা নানান সুখাদ্য নিয়ে আসেন। কিন্তু পুত্রবধূ কিছুই মুখে তুলতে চায় না। একদিন তিনি বৌমাকে বললেন,বলো তো মা, তোমার এখন কী খেতে ইচ্ছে করছে?বধূ চোখ নামিয়ে লজ্জিত মুখে বলল, ল্যাংচা।
advertisement
ল্যাংচা! সে আবার কী! চিন্তায় পড়লেন রানিমা জানতে চাইলেন, সে কেমন খাবার। সেই বধূ তখন লজ্জায় একশেষ। কিছুই আর বলতে চায় না। পরদিন সেই বধূ তার স্বামীকে তার জানায়, 'ল্যাংচা' কোন খাবারের নাম নয়। তবে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদে সে একটা মিষ্টি খেয়েছিল। সেই মিষ্টির নাম মনে নেই। তবে যে সেই মিষ্টি তৈরি করত তার একটা পা খোঁড়া। তার তৈরি ঘিয়ে ভাজা একটি বিশেষ মিষ্টিই খাওয়ার সাধ জেগেছে রাজার পুত্রবধূর। ছেলের কাছ থেকে সেই তথ্য জেনে মহারাজকে সেকথা জানালেন রানিমা।
সাধের পুত্রবধূর শখ বলে কথা! রাজার নির্দেশে তক্ষুনি এক বিশ্বস্ত কর্মচারীকে নদীয়া পাঠালেন মহারাজ। রাজার জরুরি পত্র নিয়ে ঘোড়া ছোটালেন সেই রাজ কর্মচারী। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুমতিতে সেই খোঁড়া ময়রাকে বর্ধমানে নিয়ে আসা হল।
বর্ধমানের মহারাজ সেই ব্যক্তিকে বর্ধমানের বড়শুল গ্রামে ভূসম্পত্তি দান করলেন। ঘর করে দিলেন। তাঁর দোকান হল বাদশাহী সড়কের উপর শক্তিগড় গ্রামে। প্রতিদিন তার ভিয়েন থেকে একমণ করে সেই বিচিত্র মিষ্টি সরবরাহ হত বর্ধমান রাজপ্রাসাদে। ল্যাংড়া ময়রার সেই মিষ্টি ল্যাংচা নামে খ্যাতি পেল। আজ বড়শুলের কাছে দু নম্বর জাতীয় সড়কের দু ধারে ল্যাংচার দোকানের রমরমা। তার পেছনে রাজ পরিবারের অবদান কখনোই ভোলার নয়।
Saradindu Ghosh