হেফাজতে রেখে জোর করে তাঁর স্বামী লালনকে দিয়ে বেশ কয়েকজনের নাম বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। হেফাজতে থাকাকালীন লালনকে মানসিক চাপ দিতে থাকা হয়, করা হয় মারধরও। সোমবার হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর এমনই অভিযোগ এনে সিবিআই কর্তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন মৃত লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই খুনের মামলা রুজু হয়। তদন্ত শুরু করে রামপুরহাট থানার পুলিশ।পরে সেই মামলার তদন্তভার নেয় সিআইডি। আর মামলার তদন্তের স্বার্থেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী জাহাঙ্গীরের বয়ান রেকর্ড করল সিআইডি।
advertisement
কেন জাহাঙ্গীরের বয়ান গুরুত্বপূর্ণ? সূত্রের দাবি, ঘটনার দিন সিবিআই ক্যাম্পে জাহাঙ্গীরও ছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে। তাই ঘটনার দিন কি ঘটেছিল? ঘটনা পরম্পরা জানার জন্য জাহাঙ্গীরকে জেরা করতে রামপুরহাট সংশোধনাগারে পৌঁছে যান সিআইডি কর্তারা। সূত্রের খবর, সোমবার লালনের গতিবিধি কেমন ছিল? লালন-জাহাঙ্গীরের মধ্যে ওই দিন কোনও কথাবার্তা হয়েছিল কি না? এই বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। জেরায় উঠে আসে রেশমা বিবির অভিযোগ প্রসঙ্গ বলে সূত্রের দাবি। সিআইডি কর্তারা জানতে চান সিবিআই জেরার সময় কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করেছিল কি না? লালনকে জেরার সময় জাহাঙ্গীরের কখনও উপস্থিতি ছিল কি না? সূত্রের দাবি, জাহাঙ্গীর জেরাতে জানিয়েছেন, দু-তিন বার তাকে ও লালনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে। তারা অস্থায়ী ক্যাম্পে হেফাজতে থাকাকালীন এক সঙ্গে ছিলেন । বয়ান রেকর্ডের পুরো পর্ব ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। শুক্রবার বগটুই গ্রামে গিয়ে লালনের পরিবারের সদস্যদের বয়ান রেকর্ডের সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর। তবে এদিন সকাল থেকে ঘণ্টা খানেক সিবিআই অস্থায়ী ক্যাম্পে তদন্তের স্বার্থে একাধিক বিষয় পরীক্ষা করে দেখেন সিআইডি কর্তারা। ঘটনাস্থল বাথরুম ছাড়াও পরীক্ষা করা হয় সিবিআইয়ের ইনভেস্টিগেশন রুম। খতিয়ে দেখা হয় অন্য ঘরগুলিও। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পুরো বিষয়টি ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে দাবি। এমনকি পুরো অস্থায়ী ক্যাম্প বিল্ডিংয়ের মাপজোক করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে ভিডিও।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও নমুনা সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে আসে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল। তারা ঘটনাস্থল বাথরুমের একাধিক বিষয় পরীক্ষা করেন। সূত্রের খবর, ওই বাথরুমে একটি প্ল্যাস্টিক বালতি পাওয়া গিয়েছে। রয়েছে কমোডও। এগুলি ব্যবহার হয়েছিল কি না, তা পরীক্ষা করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এছাড়াও তারা ওই অস্থায়ী ক্যাম্পের অন্যান্য ঘরগুলিও পরীক্ষা করেন। প্রয়োজন হলে তারা ফের আসতে পারেন। এই প্রক্রিয়ার মাঝেই রামপুরহাট হাসপাতালে গিয়ে ময়না তদন্ত সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে সিআইডি-র তরফে।