জেলেপাড়ার তাহের মিঞা, বাড়ি ফিরছিলেন একটু রাত করেই। বাড়ির কিছুটা দুরেই বাঁশবাগানে আচমকাই অনেকটা কুকুরের মত একটা জন্তু লাফিয়ে পড়ে তাঁর ঘাড়ে। সাইকেল থেকে পড়ে গিয়েও সাহসে ভর করে তাকে কোনওমতে তাড়ান তাহের। তার আগে অবশ্য ধারালো নখ, দাঁতে ভালমতোই জখম হয়েছেন তিনি। এরপর থেকেই মিনাখাঁ ব্লকজুড়ে জেলেপাড়া, রাজবংশী পাড়া, মাঝি পাড়া, মালঞ্চ একের পর এক গ্রাম থেকে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। শরীরের উর্ধ্বাংশে চকিতে আক্রমণ চালিয়ে নাকি নিমেষে উধাও হয়ে যাচ্ছে অজানা সেই শ্বাপদ। সন্ধে নামতে না নামতেই ঘরে খিল। এমনটা চলছে প্রায় ১০ দিন ধরে। সাহসী কিছু গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা-মশাল নিয়ে অজানা সেই জন্তুর খোঁজ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন বটে। কিন্তু তাঁদের চোখে ধরা দেয়নি কিছুই।
advertisement
ঘটনার সঙ্গে জুড়ছে রটনাও। গ্রামের মানুষ এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত যে দিনের বেলায়ও রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। নিতান্ত প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেরোলেও দল বেঁধে একসঙ্গে বেরোচ্ছেন তাঁরা। আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামের কচিকাঁচাদের মধ্যেও। বিকেলের পর এখন আর একা টিউশন পড়তে যাওয়া নয়, সঙ্গে যেতে হচ্ছে অভিভাবকদেরও।
উত্তর ২৪ পরগণার মিনাখাঁর পরেই সন্দেশখালি ব্লক। এই ব্লকের গা ঘেঁষেই শুরু হয়েছে সুন্দরবন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার পিছনে হায়না গোষ্ঠীর কোনও প্রজাতি থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। এই প্রজাতির হায়না স্বভাবে হিংস্র। এরা সুন্দরবন এলাকাতেও থাকে। এরা জলে বহুদূর পর্যন্ত সাঁতার কেটে যেতে পারে। মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, নদী দিয়ে ঘেরা। ক্রমশ কমছে জঙ্গল। বাড়ছে জনবসতি। তাই, সুন্দরবন থেকে রায়মঙ্গল, বেতনি, ডাসা, নদী সাঁতরে এই হিংস্র জন্তুগুলি খাবারের খোঁজে বিভিন্ন গ্রামে হানা দিতে পারে। এমনটাও অসম্ভব নয়।
গ্রামবাসীদের থেকে খবর পেয়ে গত কয়েকদিন ধরেই গ্রামগুলিতে যাতায়াত করছেন বনদফতরের আধিকারিকরা। তবে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, হায়না বা অন্য কোন প্রজাতি নয়, কুকুরই আক্রমণ করছে মানুষকে।
যদিও একে কুকুরের কামড় বলতে রাজি নন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জন্তুটির আঁচড়-কামড়ের সঙ্গে কুকুরের আক্রমণের কোনও মিলই নেই। তাঁদের দাবি, কুকুর সাধারণত পায়ে, বা পিছন থেকে আক্রমণ করে। কিন্তু মিনাখাঁয় অজানা এই জন্তুটি লাফিয়ে উঠে শরীরের ওপরের অংশে কামড় বসাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অজানা জন্তুটির কামড়ে আক্রান্তদের অ্যান্টি র্যাবিস নেওয়া উচিত। এই প্রজাতির বন্যপ্রাণীরা ভাইরাসও বহনে সক্ষম। ফলে এদের কামড়-আঁচড়ে আক্রান্ত মানুষ রোগগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে উভয় সঙ্কটে উত্তর ২৪ পরগণার মিনাখাঁর মানুষ। রাত বাড়লেই ভয়ে কাঁটা হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। কখন কার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই অজানা শ্বাপদ। আপাতত তাই বনদফতরের উপর ভরসা রাখা ছাড়া এখন আর কোনও পথ খোলা নেই তাঁদের।