এরপর টানা ১০ দিন পুজো শুরুর সময় বন্দুকের গুলির আওয়াজ করে পুজোয় বসতেন পুরোহিতরা । তবে জমিদারি প্রথা অবলুপ্ত হলেও দত্তবাড়িতে এখনও টানা ১০ দিন ধরে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে দেবীর আরাধনা করা হয় । পরিবারের সদস্যরা সকলেই কর্মসূত্রে দূরদূরান্তে থাকেন ৷ তবে পুজোর সময় তাঁরা বাড়ি ফেরেন ৷ এখনও প্রথা মেনেই রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হয় ৷ বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পী, পুরোহিত ও ঢাকিরা এই বাড়িতে পুজোয় সামিল হন । কলকাতার জমিদার রামচদ্র দত্ত ১৬৭৫ সালে সুন্দরবনের কাছে জয়নগরে এসে নিজের জমিদারি স্থাপন করেন। তখন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অধিকাংশই ছিল সুন্দরবনের অংশ।তার পর থেকেই এই অঞ্চলে পুজো শুরু করেন রামচন্দ্র দত্ত। এই পুজোয় ব্রাহ্মণরা পুজো শুরু করেন বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ে।
advertisement
মহালয়ার পর দিনই হয় বোধন। দশদিন ধরে এখানে উদযাপিত হয় দুর্গাপুজো। বর্তমানে গুলি না ছুঁড়লেও আতসবাজি ফাটিয়ে পুজো শুরু করা হয়। বলি প্রথা এখনও রয়েছে এই পুজোয়।প্রসঙ্গত, বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন এই বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন এই বাড়ির পূর্বপুরুষ যোগেন্দ্র কিশোর দত্তের বন্ধু। এই বাড়িতে বহুদিন কাটিয়েছেনও সেই সুবাদে। বঙ্কিমের একাধিক লেখাতেও দত্তবাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায় সেই সূত্রেই। অন্যদিকে, পারিবারিক সূত্রে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দত্ত বাড়িয়েছে আত্মীয় থাকার সুবাদে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়িতে পৌঁছাতো এই দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রসাদ।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সুভাষ ছিলেন ওই বাড়ির বংশধর শিবেন্দ্রনারায়ণ দত্তের ছোট ঠাকুমার দাদা। স্বাধীনতা আন্দোলনের বেশ কয়েকটি সভা এই বাড়ির সামনের মাঠে আয়োজিত হয়েছিল সেই সুবাদেই। এছাড়াও এই দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজো ও জন্মাষ্টমীর গোপাল উৎসবে আসতেন সত্যজিৎ রায় এবং উৎপল দত্তের নিমন্ত্রণ নাট্য ব্যক্তিত্বরা। সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই দত্ত বাড়িতে বসে একাধিক উপন্যাস লিখেছেন সেই উপন্যাস গুলির মধ্যে অন্যতম হলো বিষবৃক্ষ। আগের মতন অতীতের জৌলুস আর নেই। জমিদারি পত্তনের পর ঐতিহাসিক এই দুর্গাপুজোর জৌলুস ফিকে হয়েছে। দত্ত বাড়ির র পরিবারের সদস্যরা কর্মসূত্রে সকলেই কলকাতায় থাকেন।
আরও পড়ুন: Cloudburst in Kolkata: বানভাসি কলকাতায় কি মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে? বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দিল আবহাওয়া দফতর
পুজোর দিন গুলি পরিবার সদস্যারা এই বাড়ীতে আসেন। শিবেন্দ্র নারায়ন দত্ত তিনি জানান, তৎকালীন বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দত্তবাড়ির ছেলে যোগেন্দ্র নারায়ণ দত্তের বাল্যবন্ধু হওয়ার সুবাদে এই বাড়িতে তাঁর আনাগোনা ছিল ৷ ছুটির দিনগুলি ও দুর্গাপুজোয় দত্তবাড়িতে আসতেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৷ এই দত্তবাড়ির সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুরও নিবিড় টান ছিল । দত্তবাড়ির সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল । ছোট ঠাকুমার সম্পর্কে দাদা ছিলেন তিনি ৷ সেই সুবাদে সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতা আন্দোলনের বেশ কয়েকটি সভা এই দত্তবাড়ির সামনের মাঠেই করেছিলেন । এখনও পর্যন্ত নেতাজির বাড়িতে দত্তবাড়ির দুর্গাপুজোর প্রসাদ পাঠানো হয় । স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল দত্তবাড়ি।