TRENDING:

ধুলো জমছে শান্তিপুরি তাঁতে! ভোট মিটলে ফিরবে কি তাঁতিপাড়ার সেই সুদিন ?

Last Updated:
impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#শান্তিপুর: রাণাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দু’দিন ৷ বৈশাখি গরমে ফুটছে বাংলা, সঙ্গে জোড়িদার ভোটের উত্তাপ ৷ রাণাঘাট কেন্দ্রে বসবাসকারী একটা বিরাট অংশের মানুষই নির্ভরশীল তাঁত শিল্পের উপর ৷ আর এই বিপুল সংখ্যক তাঁতি ভোটবাক্সের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটা বিরাট ফ্যাক্টর ৷ আর তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মতামত কী? কী-ই বা তাঁদের চাহিদা আগামী সাংসদের কাছ থেকে ৷ গতবারের সাংসদ শান্তিপুরের তাঁতশিল্পের জন্য কতোটা কাজ করলেন ৷ কতোটাই বা সুরাহাই বা হল-এ সব কিছু জানতে নিউজ এইটিন বাংলা ডট কম পৌঁছে গিয়েছিল রাণাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের শান্তিপুরে ৷
advertisement

কখনও তাঁতশিল্পীর বাড়ির বারান্দায়, কখনও তাঁত বোনা দেখতে দেখতেই জমল আলোচনা ৷ ইতিমধ্যেই শান্তিপুরের বিভিন্ন বুথে চলে এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ৷ বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই নিয়মমাফিক এলাকা দখলে বেরিয়ে পড়ছেন তাঁরা ৷ এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ৷ চারদিকে সাজ সাজ রব ৷ এ সব দেখে শুনে তাঁতশিল্পী শ্যামল রাজবংশী বললেন,‘‘প্রতিবারই তো নিয়ম করে ভোট দিই ৷ তবে, তেমন সুবিধে তো কিছুই পাই না ৷ দাদন নিয়ে কাজ করি ৷ মহাজন শাড়ি পিছু দেয় মাত্র ১১৫ টাকা ৷ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সুন্দর নকসা তুলে শাড়ি তৈরি করি ৷ তবে রোজগার ওইটুকুই ৷’’আসলে শান্তিপুরের বেশ কিছু এলাকা একটা সময় ছিল তাঁত ব্যবসার রমরমা ৷ তবে এখন তার জরাজীর্ণ চেহারা ৷ বলা ভাল কঙ্কালসার অবস্থা ৷

advertisement

এক-একটা বাড়িতে দশ থেকে বারোটা রয়েছে হাতে টানা তাঁত যন্ত্র ৷ সঙ্গে রয়েছে যন্ত্রচালিত তাঁত যন্ত্র ৷ তবে এ গুলোর মধ্যে একটাই তাঁতের মেশিনে কাজ চলছে ৷ তবে সেটাও আবার যন্ত্রচালিত ৷ মোটের উপর অধিকাংশ তাঁতশিল্পীই অন্য কাজে চলে যাচ্ছেন ৷ কেউ আর থাকতে চাইছেন না ৷ এই কাজে নাকি এক্কেবারে টাকা নেই ৷ দু’বেলা অন্ন সংস্থানও করা যায় না ঠিক করে ৷

advertisement

তবে প্রথমদিকে তো এমন অবস্থা ছিল না ৷ একটা সময় শান্তিপুরের তাঁতের জগৎজোড়া নাম ছিল ৷ ‘‘শান্তিপুরে ডুরে শাড়ি সরমের অরি/ নীলাম্বরী, উলাঙ্গিনী, সর্বাঙ্গ সুন্দরী’’...শান্তিপুরের তাঁত শিল্প সম্পর্কে একটা সময় এমনটাই লিখেছিলেন দীনবন্ধু মিত্র ৷ ‘শানা’য় পোড়েনকে ঘা মারা চলত সমানতালে ৷ সেই শব্দ আর ছন্দে মাতোয়ারা ছিল গোটা গ্রাম ৷ সুতো জড়নো মাকুকে একের পর এক ছুটিয়ে দেওয়া চলত আড়াআড়ি (পোড়েন) কিংবা লম্বালম্বি সুতোগুলোর (টানা) বুক চিরে ৷ শৈল্পিক নৈপুণ্যে দিন-রাত তৈরি হত চোখ জুড়িয়ে দেওয়া রঙ-বেরঙের শাড়ি ৷ নীলাম্বরী, গঙ্গা-যমুনা, ভোমরা, রাজমহল, চান্দমালা-এমনতরো কয়েশো বাহারি নকশাকাটা শাড়ি তৈরিতে বুঁদ ছিল শান্তিপুরের কয়েক ঘর তাঁতশিল্পী ৷

advertisement

শান্তিপুরের তাঁতশিল্পের কথার উল্লেখ রয়েছে শ্রী অদ্বৈত চারিয়ার অদ্বৈতমঙ্গলে ৷ নথি অনুযায়ী এই হস্তশিল্প শান্তিপুরে আসে পঞ্চাদশ শতকের গৌড় এর রাজা গনেশের সময় কালে। পূর্বে বিভিন্ন জাতের তাঁতিদের একটি বড় অংশ বৈষ্ণব ধর্মে দিক্ষিত হয়ে ধামরাই (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে নবদ্বীপে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তাঁরা ভগবান মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের পায়ে থিতু হতে চেয়েছিলেন। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন, শান্তিপুরের শ্রী অদ্বৈত চারিয়া’র কাছে যেতে। তাঁরা তখন শান্তিপুরে বসবাস করতে শুরু করেন এবং তাঁদের চিরাচরিত তাঁত শিল্প চালিয়ে যেতে থাকে। শান্তিপুরের এই তাঁত শিল্প কারখানার আকার নেয় নদিয়ার রাজা রাজ রুদ্র রায় (১৬৮৩-১৬৯৪) এবং মুঘল শাসনের সময়কালে।

advertisement

বাংলার তাঁত শিল্পের পীঠস্থান শান্তিপুরের প্রসিদ্ধি সারা ভারত তথা সারা বিশ্বজুড়ে। প্রথমেই শান্তিপুরের তাঁত শিল্পের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানা প্রয়োজন। মোঘল আমলেই সর্বপ্রথম শান্তিপুরের উৎকৃষ্ট তাঁতের কাপড় সারা ভারত জুড়ে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ও এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। শান্তিপুরের তাঁত নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও আগ্রহী ছিল ৷ সেই আমলে বছরে প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড মূল্যের তাঁত বস্ত্র রপ্তানি করা হত।

কিন্তু সময় বদলেছে আর তার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটেছে। সেই স্বর্ণযুগ আজ আর নেই, বর্তমানে শান্তিপুরের তাঁত শিল্পের অবস্থা ক্রমশ নিম্নগামী ৷ শান্তিপুরী তাঁত এখনও পুরনো ঐতিহ্য বজায় রাখতে গিয়ে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। আর তাঁত বুনে তাঁতিরা যে টাকা উপার্জন করেন, তাতে সংসার চালানো সম্ভব নয় বর্তমান যুগে।কিন্তু তাঁতিরা এই পিতৃপুরুষের পেশা ছেড়ে দিতে রাজি নন, কারণ এ শুধু তাদের জীবিকা নয়, এ তাঁদের বংশগৌরব। কিন্তু সেই তাঁতশিল্পই এখন ধুঁকছে ৷ এখন তার কঙ্কালসার অবস্থা ৷

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

ঘরের দাওয়ার বসে সুতো কাটছিলেন মিতা রাজবংশী ৷ স্বামীও আগে তাঁত বুনতেন ৷ তবে এখন তিনি বেঙ্গালুরুতে মাছ ধরার কাজ করেন ৷ তবে তিনি এখনও টুকটাক তাঁত বোনার কাজ করে চলেছেন ৷ বললেন,‘‘এই কাজে এক্কেবারে টাকা নেই ৷ সুতো কেটে দিনে ১০ থেকে ২০ টাকা রোজগার ৷ ওতে আর কী হয়! তবে ঘরে বসে থেকে কী লাভ, তাই করি ৷ তবে,আমার ছেলে-মেয়েরা এই কাজে আসুক তা চাই না ৷’’ দু-ঘর পেরোতেই রমেন তাঁতির ঘর ৷ একটা সময় তাঁর তাঁতের শাড়ির নাকি বিরাট নাম-ডাক ছিল ৷ এখন বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন ৷ তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে এসেছেন তাঁতের শাড়ি বোনার কাজে ৷ তিনি বললেন,‘‘প্রতিবারই সরকার আসে আবার চলে যায় ৷ ভোটের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ তাঁতশিল্পীদের জন্যে বিমা করে দেবেও বলেছিল ৷ কোথায় কী? কোনও কিছুই আমরা পাইনি ৷ খুব খারাপ অবস্থা ৷’’আগামী সোমবার ভোট ৷ ফের আশায় বুক বেঁধে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন তাঁরা ৷ তাঁদের সেই আশা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার কতোটা পূরণ করে ৷ সেটাই এখন দেখার!

বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
ধুলো জমছে শান্তিপুরি তাঁতে! ভোট মিটলে ফিরবে কি তাঁতিপাড়ার সেই সুদিন ?