বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির কাছের গ্রাম লোকপুর খ্যাত সেরপাই-এর জন্য। এই গ্রামেরই ভোলানাথ কর্মকার শুধু বাংলাতেই নয়, ভারতের নানা স্থানে বেশ নাম কুড়িয়েছেন সেরপাই তৈরির জন্য। ভোলানাথ এই শিল্পটি শিখেছেন তাঁর শ্বশুরমশাই কার্তিক কর্মকারের কাছ থেকে। আর যেহেতু লৌকিক শিল্পীদের পরিবারও সাধারণভাবে তাঁদের নানা কাজে হাত লাগান। সেরপাই তৈরিতে ভোলানাথের স্ত্রী রুমা আর কন্যা পুতুলও যথেষ্ট দক্ষ। কিন্তু তাঁরা ভোলানাথের সহকর্মীরূপেই বেশি কাজ করতে উৎসাহী। আর এই কাজ করে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন ভোলানাথ কর্মকার। এর পরবর্তীকালে ২০১৭ সালে তার স্ত্রী রুমা কর্মকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন।
advertisement
আগে আমকাঠ দিয়ে তৈরি হত সেরপাই। এখন হয় সোনাঝুরি দিয়ে। নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী কেটে যে পাত্র বা খোনাটি তৈরি হয়, তার নাম ডোল। একে ঘসে মসৃণ করা হয়। ভুষো কালি, শিরিষ আঠা আর রজন দিয়ে কালো রং করা হয়। এর পর নকশা তৈরির পালা। এর পর বাইরে তৈরি হয় পিতলের কারুকাজ, পিতলের পাত কেটে। পিতলের পাতের নকশার জন্য রয়েছে পুরোনো দিনের ফর্মা।
এক সময় গ্রামে-গঞ্জে-পল্লিতে ধান, গম, চাল, দুধ প্রভৃতি পরিমাপের একক ছিল সের, পাই, আধ পাই, পোয়া, আধ পোয়া, ছটাক প্রভৃতি। এক পাই-এর অর্থ প্রায় ৪৬৬ গ্রাম। দুই পাইয়ে হয় এক সের। অর্থাৎ এক সের মানে হল প্রায় ৯৩৩ গ্রাম। তবে একদা এই পরিমাপের একক আজ এক অনন্য শিল্পকর্ম। তবে কোথায় কোথায় পাড়ি দিয়েছে এই সেরপাই! এই বিষয়ে শিল্পীর কাছ থেকে জানা যায় এই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও প্রত্যন্ত কর্মকার পাড়া থেকে ‘সের-পাই’ শিল্প পাড়ি দিয়েছে মুম্বই, ভোপাল, দিল্লি, বেঙ্গালুরু প্রভৃতি জায়গায় ৷ দু’হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ করেন শিল্পী।একই পরিবারের তিনজন রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিল্পী। আর তাই নিয়ে কার্যত গর্বিত বীরভূম।
সৌভিক রায়





