জেলার গ্রামেগঞ্জে নানা আচার-উপাচার আর ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্য দিয়ে নবান্ন পালিত হয় মহাসমারোহে।সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসেই নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাংলায় এই উৎসবের মূল আকর্ষণ দেবী অন্নপূর্ণার পুজো। তবে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার একটি ছোট্ট গ্রাম বীজনগর এই নবান্ন উৎসবের ক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রমী। বিগত কয়েক দশক ধরে এই গ্রামে মহা ধূমধামের সঙ্গে নবান্ন উৎসব পালিত হয়ে আসছে, যা এখন কার্যত গ্রামের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
advertisement
এই গ্রামে নবান্ন উপলক্ষে কেবল দেবী অন্নপূর্ণারই পুজো হয় না। একসঙ্গে পূজিত হন লক্ষ্মী-নারায়ণ, কার্তিক, গণেশ ও মহাদেব-সহ একাধিক দেবদেবী। নবান্নকে কেন্দ্র করে আলোর মালায় সেজে ওঠে গোটা গ্রাম। সন্ধ্যা নামলেই ঝলমলে আলোয় অন্যরকম রূপ নেয় এই ছোট্ট জনপদ। দূরদূরান্তে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনেরা এই সময় ঘরে ফেরেন, সকলেই শামিল হন নবান্নের আনন্দে।
গ্রামবাসী প্রদীপ কুমার বক্সী এই প্রসঙ্গে বলেন, “গ্রামের অন্যান্য উৎসবের মধ্যে এটা একটা আলাদা ঐতিহ্যবাহী উৎসব। গ্রাম-সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বহু মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন। কয়েকটা দিন আনন্দের সঙ্গেই কাটে।” বিশেষত্ব হল গ্রামের সব পাড়া একসঙ্গে, সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই নবান্ন উদযাপন করে। এই সম্মিলিত উদযাপনই বীজনগর গ্রামের নবান্ন উৎসবকে আরও আলাদা মাত্রা দেয়।কাটোয়ার বীজনগর গ্রামে নবান্ন উপলক্ষে বিগত কয়েক দশক ধরে অন্যান্য দেবতার পাশাপাশি মহাদেবের পুজোও হয়ে আসছে। এই মহাদেবের পুজোর বিশেষত্ব তাঁর বিশালাকার মূর্তি এবং পুজোয় ব্যবহৃত ব্যতিক্রমী উপাচার। এখানে মহাদেবকে নিবেদন করা হয় আস্ত ডাবের কাঁদি এবং আমপাতার বদলে আমের ডাল। এই প্রথা বহু বছর ধরে চলে আসছে এবং তা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলেন সকলেই।
আরও পড়ুন : ভক্ত সমাগম বুদ্ধ পূর্ণিমার পুণ্যলগ্নে, ৫ শতক ধরে নদিয়ার বীরনগরে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী উলাই চণ্ডী
শুধু মহাদেবই নন, এই গ্রামের আর এক আরাধ্য দেবতা গণেশের পুজোতেও রয়েছে অভিনব রীতি। গণেশ পুজোর বিসর্জন যাত্রার সময় বাতাসা ও চকোলেট ছিটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। চার দিনব্যাপী চলা এই নবান্ন উৎসব ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন গোটা গ্রামের মানুষ। শুধু গ্রামবাসীরাই নন, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনেরাও এই উৎসবে অংশ নেন। সমস্ত দিক বিবেচনা করে এলাকায় সবথেকে শেষে নবান্ন উদযাপন হয় এই বীজনগর গ্রামেই।নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে বসে মেলা। নানা রকম দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। খেলনা, মিষ্টি থেকে শুরু করে নানা রকম জিনিসে মুখর হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। উৎসব, আচার, ধর্মীয় বিশ্বাস আর সামাজিক মিলনমেলার এক অনন্য মেলবন্ধন তৈরি হয় কাটোয়ার বীজনগর গ্রামের এই নবান্ন উৎসবে।