চাষিদের অভিযোগ, পোকার ভয়াবহ উপদ্রবেই নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনও ফল মিলছে না। কেউ বারবার ওষুধ বদলাচ্ছেন, কেউ অতিরিক্ত খরচ করে নতুন নতুন ওষুধ দিচ্ছেন, তবু জমির চেহারা পাল্টাচ্ছে না। ধান চাষি মধু মাঝি বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়ে ৯ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আমার সব ধান লাল হয়ে গিয়েছে। কীভাবে টাকা শোধ করব সেটাই ভাবছি। বাড়িতে ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। ত্রিপল টাঙানো বাড়ি আমার। কী করব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না, মরা ছাড়া আমার কোনও উপায় নেই।”
advertisement
আরও পড়ুনঃ সম্পর্ককে মান্যতা দেয়নি প্রেমিক, ভালবাসার মানুষের বাড়ির উঠোনে বসে বিষপান! মর্মান্তিক পরিণতি যুবতীর
কেতুগ্রাম ২ ব্লকের শিবলুন, নবগ্রাম, গঙ্গাটিকুরি, বহড়ান সহ একাধিক জায়গায় ইতিমধ্যেই প্রায় হাজার হাজার বিঘা ধান জমিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি, কৃষি দফতরের তরফে কোনও নজরদারি বা পরামর্শ নেই। কেউ মাঠে এসে পরিস্থিতি দেখছে না। চাষিরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, “চোখের সামনে ধান নষ্ট হচ্ছে। অথচ কৃষি দফতর নীরব। আমরা কাকে বলব?”
তথ্য অনুযায়ী, কাটোয়া মহকুমার পাঁচটি ব্লক কাটোয়া ১, কাটোয়া ২, কেতুগ্রাম ১, কেতুগ্রাম ২ এবং মঙ্গলকোট মিলিয়ে এই মরসুমে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কেতুগ্রামের অনেক এলাকায় ইতিমধ্যেই ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ধান পেকে গিয়েছে। ঠিক সেই সময়েই দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। অনেক চাষি সমবায় সমিতি বা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন। এখন তাঁরা হতাশ। অসহায় সুরে অনেকের প্রশ্ন, “টাকা ধার করে চাষ করেছি, ধানই যদি না হয়, ঋণ শোধ করব কীভাবে?”
ক্ষতির আশঙ্কায় অনেকে এখন থেকে নতুন মৌসুমের কথা ভাবছেন, কেউ আবার জমিতে চাষ করার সাহস পাচ্ছেন না। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে, চাষিরা নিজেরাই দল বেঁধে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আগাছা তুলে বা মাটি পরীক্ষা করে দেখছেন কোনও ভাবে ফসল বাঁচানো যায় কিনা। ধান চাষি রাজকুমার ঘোষ বলেন, “কৃষি দফতর এখনও আমাদের কাছেই আসেনি। আর কী বলব? হাজার হাজার টাকার ওষুধ দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। ধান তো একেবারেই হবে না মনে হচ্ছে। ধান যে কাটব সেই লেবারের মজুরি কীভাবে দেব সেটাও জানি না। মধ্যবিত্ত চাষি দানা খাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।”
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে পোকা ও ছত্রাকের বিস্তার বেড়েছে। চাষিদের দাবি, কৃষি দফতরের তরফে যদি সময়মতো সতর্কতা বা পরামর্শ দেওয়া হত, তাহলে ক্ষতি এতটা বাড়ত না। এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুখ খুলতে চাননি। শুধু বলেন, “ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” সব মিলিয়ে এখন জোর বিপাকে পড়েছেন ধান চাষিরা।





