এতদিন পর্যন্ত রাজ্যের প্রধানত সেচ সেবিত জেলা গুলিতে সুখসাগর প্রজাতির শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করা হত । এপ্রিলের গোড়ার দিকে ওঠা এই পেঁয়াজের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় এতটাই কম হত যে কয়েকমাস যেতে না যেতেই তা শেষ হয়ে যেত । এরপর বছরের প্রায় আট মাস ধরে এরাজ্যের বাজারে একছত্র আধিপত্য থাকত নাসিক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ।
advertisement
নাসিক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম সেখানের ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করায় ও পরিবহণ খরচ অনেক বেশি পড়ায় মাঝে মধ্যেই পেঁয়াজের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যেত । পেঁয়াজের বাজারে নাসিকের এই একাধিপত্য ঠেকাতে বাঁকুড়া পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের অসেচসেবিত এলাকায় বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয় । দেখা যায় শীত কালীন পেঁয়াজ বাজারে শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা কালীন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় সারা বছরই বাজারে পেঁয়াজের দাম কম থাকছে । এরপরই ওই তিন জেলায় ব্যপক হারে বর্ষা কালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয় রাজ্যের উদ্যান পালন দফতর । কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় বর্ষাকালীন পেঁয়াজের বীজ নিয়ে । কারন এতদিন পর্যন্ত বর্ষাকালীন পেঁয়াজের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় এগ্রি ফাউন্ড ডার্ক রেড প্রজাতির বীজ এ রাজ্যে উৎপাদন হত না । নাসিক থেকে প্রতি বছর ২ হাজার থেকে ২৬০০ টাকা কিলো দরে ওই পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহ করতে হত চাষীদের । বীজের পিছনেই মোটা অঙ্কের টাকা চলে যাওয়ায় বর্ষা কালীন পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাতেন না অনেক চাষী । এরপরই উদ্যান পালন দফতরের উদ্যোগে এগ্রি ফাউন্ড ডার্ক রেড প্রজাতির পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের পরীক্ষা মূলক উৎপাদন শুরু করে উদ্যান পালন দফতর ।
গত বছর বাঁকুড়ার তালডাংরা ফার্মে পরীক্ষামূলক ভাবে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের পর চলতি বছর তা ব্যাপক হারে চাষ করা হয় । কৃষি বিজ্ঞানীদের ধারণা চলতি বছর এই ফার্মেই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের পরিমাণ সাত কুইন্টাল ছাড়িয়ে যাবে । সরকারিভাবে উৎপাদিত এই বীজ পেঁয়াজ চাষিদের কাছে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রিও করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকরা । সেক্ষেত্রে চলতি বছর বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে চাষীরা নতুন করে উৎসাহ পাবে । পেঁয়াজ চাষ বৃদ্ধি পেলেই স্বাভাবিক ভাবেই সামনের মরশুম থেকে এ রাজ্যে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি অনেকটাই রোধ করা যাবে বলে ধারণা কৃষি বিজ্ঞানী ও উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকদের ।