কথিত আছে, বাংলায় পাল বংশের রাজত্বকালে স্বপ্নে মা তারার নির্দেশ পান জয়দত্ত সওদাগর। তারপর তিনি শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে শ্মশান থেকে মা তারার মূর্তি তুলে এনে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে তিথি উপলক্ষে প্রতি বছর চতুর্দশীর দিনে তারাপীঠে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।
advertisement
প্রথা অনুযায়ী, সোমবার ভোরে তারাপীঠের মূল মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বিগ্রহ বার করে আনা হয় বিশ্রাম মঞ্চে। জীবিত কুণ্ডের জল দিয়ে স্নান করানো হয় বিগ্রহটি। এরপর পশ্চিম দিকে মুখ করে বসানো হয় মায়ের বিগ্রহ। ঝাড়খণ্ড সীমানার কাছে মুলুটিতে যে মন্দির রয়েছে, সেই অভিমুখে বসানো হয় তারার মূর্তি। মনে করা হয়, তারা এবং মুলুটির মন্দিরের দেবী সম্পর্কে দুই বোন। এর পর সকালে মঙ্গলারতি করা হয়। দেওয়া হয় শীতল ভোগও।
সন্ধ্যায় আরতির পর বিগ্রহকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মূল মন্দিরে। সেখানে অভিষেকের পর শুরু হয় ভোগ রান্না। রাতে দেওয়া হয় অন্নভোগ। সন্ধ্যায় গর্ভগৃহে প্রবেশ করানোর পর দেবী রাজরাজেশ্বরী রূপে লক্ষ্মী মূর্তিতে পূজিত হন। যেহেতু তারা মা সিদ্ধ মা তাই তাকেই সব দেবী রূপে পুজো করা হয়। রাতের বিশেষ ভোগে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁঠার মাংস, মিষ্টি, পায়েস ও দই নিবেদন করা হবে। উৎসবের ভিড় সামলাতে মন্দির কর্তৃপক্ষ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে, পুলিশ প্রশাসনের তরফেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে।
কথিত আছে জয়দত্ত নামে এক বণিক দ্বারকা নদীতে নৌকায় চড়ে বাণিজ্য করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি তারাপীঠে নোঙর করেন। সেখানে সাপের কামড়ে তাঁর পুত্রের মৃত্যু হয়। তারাপীঠে নোঙর করায় বণিকের পরিচারক রান্না করার জন্য একটি শোল মাছ কেটে পাশের পুকুরে ধুতে যান। পুকুরের জলের সংস্পর্শে আসতেই কাটা শোল মাছটি জীবিত হয়ে পুকুরের গভীরে চলে যায়। পরিচারক এই অলৌকিক ঘটনাটি বণিককে জানালে, তিনি সর্পদংশনে মৃত তাঁর পুত্রকে সেই পুকুরের জলে স্নান করান। আশ্চর্যজনকভাবে মৃত পুত্রও বেঁচে ওঠে। এরপর জয় তারা, জয় তারা বলতে থাকেন বণিক। সেই পুকুরটিই পরবর্তীকালে জীবিত কুণ্ড নামে খ্যাত। সেই রাতেই বণিককে স্বপ্ন দেন মা তারা। দিনটি ছিল শুক্লা চতুর্দশী। স্বপ্ন পেয়ে সেই দিনই তারাপীঠে মা তারার পুজো শুরু করেন বণিক জয়দত্ত।