গত কয়েক বছর ধরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার জেরে খেজুরের উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে চাহিদার তুলনায় জোগানও বেশ কম। ২০১৮ সাল থেকেই তাই নলেন গুড়ের বাজার চড়ছে। দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন দোকানিরা।
আরও পড়ুন- ১৬ বছর জেলে থেকে উপার্জন লাখ টাকা, মুক্তি পেল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ২ আসামি
সাধারণত খেজুর গাছে ফুটো করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বাঁশের পাত। কৃষকরা বলেন ‘জিভ’। সেই পাতের তলায় বেঁধে দেওয়া হয় হাঁড়ি। সারা রাত ধরে রস চুঁইয়ে চুঁইয়ে জমা হয় হাঁড়িতে। কৃষকরা বলেন যে, শীত যত বাড়ে, রস বাড়ে তত।
advertisement
কিন্তু এই ভরা ডিসেম্বরেও শীত কই? ফলে রসের আকাল। বাঁকুড়ার অন্যতম গুড়ের কারবারি রাইসুদ্দিন খান বলেন, ‘গত বছরও আমি কলকাতায় ১০ কুইন্টাল নলেন গুড় পাঠিয়েছি।
কিন্তু এই বছর নভেম্বরে কিছুই পাঠাতে পারিনি। শীতও দেরিতে এসেছে’। ফলে নলেন গুড়ের আকাল যে এই বছরও থাকবে বলাই বাহুল্য। আর আকাল থাকলে দামও যে বাড়বে, সেটাও স্পষ্ট।
উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট, টাকি ও বাদুড়িয়ার গুড়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ এর মনমাতানো গন্ধ আর স্বাদ। খেজুর গাছ থেকে যাঁরা রস সংগ্রহ করে, তাঁদের সাধারণত শিউলি বলা হয়।
গত কয়েক বছর ধরে শিউলির সংখ্যাও কমছে। বাপ-ঠাকুরদার পেশায় আসতে চাইছেন না পরবর্তী প্রজন্ম। কোন গাছ থেকে ভাল রস মিলবে, সেগুলো দেখে রাখা, ভোর ৩ টের সময় গাছে উঠে ‘জিভ’ লাগানো, হাঁড়ি বাঁধা, সকালে আবার হাঁড়ি নামানো – হ্যাপা অনেক। নতুন প্রজন্ম এর মধ্যে ঢুকতে চাইছে না। ফলে রস সংগ্রহ আরও কমছে।
আরও পড়ুন- 'উনি বিজেপি করেন তাই ডাক পাননি', মিঠুনের পাশে এবার দিলীপ
গুড়ের জোগানদার দুলাল মুজমদার বলছেন, ‘ভাল মানের নলেন গুড়ের ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত যে গুড় হয়েছে, তা নিম্ন মানের। আমিও কলকাতার মিষ্টির দোকানে সাপ্লাই দিই। কিন্তু গুড়ের মান দেখে তারা খুশি নয় মোটেই’।
কিন্তু নলেন গুড় তৈরির গোটা প্রক্রিয়ায় আবহাওয়ার বড় হাত রয়েছে, সেটা কারও হাতে নেই, আক্ষেপ দুলালের। কলকাতায় মিষ্টির দোকানে নলেন গুড়ের মিষ্টি দেখলেই মাছির মতো ভিড় জমান খরিদ্দাররা।
বিক্রিবাটা এক ধাক্কায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু নলেন গুড়ের দাম বাড়লে মিষ্টির দামও বাড়াতে হয়। সেটাই দস্তুর। তাই হচ্ছেও। এবারের শীতে নলেন গুড় আর নলেন গুড়ের মিষ্টি খেতে গিয়ে বাঙালির পকেট কতটা খসে, সেটাই এখন দেখার।